শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হলো পরীক্ষানির্ভর। সবাই পরীক্ষায় ভালো ফল করার চিন্তায় থাকে। অথচ পরীক্ষায় ভালো করার সঙ্গে প্রকৃত ভালোর কোনো সম্পর্ক নেই। সিস্টেমে পরিবর্তন আসছে, আশা করি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
Advertisement
মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ হতে হবে’- বঙ্গবন্ধুর এ বাণীকে প্রতিপাদ্য করে ডিএমপি পরিবারের মেধাবী সন্তানদের অনুপ্রেরণা জোগাতে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেন ড. জাফর ইকবাল।
Advertisement
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি ২০২২ এর আওতায় ৩১৭ জন ও ডিএমপি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৩ এর আওতায় ৮১৪ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা ও শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমার বাবাও একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তোমাদের বাবারাও পুলিশ অফিসার। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন প্রথম বুলেট কিন্তু ছুড়েছিলেন এই পুলিশ অফিসাররা এই রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকেই। রাজারবাগে এলে মনে হয় তীর্থভূমিতে এসেছি। এটি এমন একটি জায়গা যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ তথা সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশটা পেয়েছি। তোমাদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়তে হবে।
‘সামনে যে দিন আসছে তা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। মানুষের কাজ যন্ত্র বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে ফেলা হবে। সুতরাং তোমাদের এমন জায়গায় যেতে হবে, নিজেদের এমন অবস্থান তৈরি করতে হবে যেন কোনো কিছু দিয়েই তোমাদের রিপ্লেসমেন্ট করতে না পারে। তোমাদের এমন দক্ষতা অর্জন করতে হবে যেন কোনো সফটওয়্যার তোমাকে রিপ্লেসমেন্ট করতে না পারে’- শিক্ষার্থীদের বলেন তিনি।
বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, যন্ত্র ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে চিন্তা করার ক্ষমতা বা ইমাজিনেশন। যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু তোমার আছে। রোবট দুনিয়ার সব কিছু জানে, কিন্তু চিন্তা করতে পারে না। তোমাদের সেই চিন্তা করার ক্ষমতাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তোমাদের এ চিন্তাশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে বই পড়া। নতুন চিন্তা করার শক্তি অর্জন করা।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, তোমরা যারা এখানে রয়েছো, তোমাদের বাবা যারা পুলিশে কাজ করছেন তাদের পূর্বসূরিরা অকুতোভয় সৈনিক, যারা দেশমাতৃকার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সামান্য থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা যুদ্ধ করেছিলেন এবং বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের বাঙালিদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিলেন, সেই সব বীর সদস্যদের উত্তরসূরী আমরা।
তিনি বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনগণের জানমাল, সরকারি সম্পদ হেফাজত করা। অন্য যে কোনো সংস্থার কর্মঘণ্টা আছে, কিন্তু পুলিশের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। পরিবারকে সময় দেওয়া এবং পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার সময়টুকুও থাকে না। তারপরও তোমরা (পুলিশের সন্তানেরা) কিন্তু থেমে নেই, তোমাদের এ কৃতিত্বই তারই প্রমাণ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা যখন শিক্ষাগ্রহণ করি তখন শিক্ষার উদ্দেশ্য কী তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য থাকে বড় হয়ে একটি ভালো চাকরি করবে। তারা চাকরিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে থাকে। কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ববোধ অর্জন, সংরক্ষণ ও জীবনে তা প্রতিফলিত করা। সে বিষয়টি সবসময় বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু চাকরির সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থাকা উচিত নয়।
‘মোবাইল ফোন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মোবাইল ফোন মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি মোবাইল ফোনের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই, মোবাইল ফোন হাতের মুঠোয় একটি বিশ্বকোষ বা জ্ঞানভাণ্ডার। এটিকে যদি ইতিবাচকভাবে তোমরা ব্যবহার করতে পাবো তাহলে তা থেকে অনেককিছু শিখতে ও জানতে পারবে। মোবাইল ফোনকে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার না করে ইতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে’- বলেন ডিএমপির কমিশনার।
কৃতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ; ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা।
টিটি/এমকেআর