অর্থনীতি

ভালো মানের চা উৎপাদনে পিছিয়ে বাংলাদেশ

গত দুই যুগের ব্যবধানে দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। সবশেষ গত বছর (২০২৩) দেশের ইতিহাসে রেকর্ড চা উৎপাদন হয়েছে। তবে উৎপাদন বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও মান নিয়ে আছে হতাশা। চা উৎপাদনকারী বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ওপরের সারিতে থাকলেও মান বিচারে এখনো অনেক পিছিয়ে।

Advertisement

এ কারণেই উৎপাদন বাড়লেও সে তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে না। ফলে উৎপাদক পর্যায়ে এর সুফলও মিলছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়লে রপ্তানিপ্রবাহ আরও গতিশীল হবে। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। একই সঙ্গে কমবে চায়ের আমদানিনির্ভরতাও।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে চা। চাহিদা বাড়তে থাকে অর্থকরী এ ফসলটির। বিস্তৃত হয় চায়ের বাজার। বাড়তে থাকে উৎপাদন। তবে সময়ের ব্যবধানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চা রপ্তানিতে। বিগত দুই যুগের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও রপ্তানি ঠেকেছে ১০ শতাংশে বা তারও নিচে।

দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলেও বাড়ছে না রপ্তানি আয়। তারা মনে করেন, ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়লে আমদানিনির্ভরতা যেমন কমবে, রপ্তানিপ্রবাহও হবে আরও গতিশীল। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও

Advertisement

এ শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদন পর্যায়ে চায়ের ন্যায্যমূল্য মিলছে না। এতেই ধুঁকছে অর্থ আহরণকারী ফসলটির উৎপাদন শিল্প। যে কারণে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলেও বাড়ছে না রপ্তানি আয়।

অন্যদিকে দেশে চা উৎপাদন বাড়ার পরও আমদানিনির্ভরতাও কাটছে না। এ নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। চা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে চায়ের উৎপাদন আশাব্যঞ্জকভাবে বাড়লেও ভালো মানের চা উৎপাদনের পরিমাণ এখনো সেভাবে বাড়েনি। এ কারণেই শীর্ষস্থানীয় চা বিপণন ও মোড়কজাতকারী কোম্পানিগুলো এখনো নিয়মিত আমদানির মাধ্যমে চায়ের চাহিদা মেটাচ্ছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষায় পিছিয়ে চা বাগানের শিশুরা চা জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর বসা চেয়ারসহ দেড়শো বছরের ইতিহাস

অবিভক্ত ভারতের এ অঞ্চলে চা-শিল্পের যাত্রা শুরু ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৮২৮ সালে চট্টগ্রামের কোদালায় চা বাগান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে যে স্থানটিতে চট্টগ্রাম ক্লাব ঠিক সেখানেই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চা গাছের চারা রোপণ করা হয় ১৮৪০ সালে। তবে এ অঞ্চলে সর্বসাধারণের মাঝে চায়ের সঙ্গে পরিচয় বা চা পানের অভ্যস্ততা গড়ে ওঠে তারও অনেক পড়ে।

Advertisement

বাংলাদেশে বর্তমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয়, গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চা-শিল্প। এ শিল্পের বহুমুখী বিকাশও ঘটছে উত্তরোত্তর।

জানা যায়, এক দশক আগেও বাংলাদেশ ছিল শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ১০ নম্বরে। পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের উদ্যোগ নেয় সরকার। বর্তমানে চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। এতে সময়ের ব্যবধানে চা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ও সপ্তমে থাকা দুই দেশের সঙ্গে পার্থক্য বেশি হওয়ায় আপাতত অষ্টম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

চা উৎপাদনে চীন বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দেশটি চায়ের আবিষ্কারকও। পুরো বিশ্বের অর্ধেক চা-ই উৎপাদন করে চীন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত। তিন নম্বর অবস্থানে কেনিয়া, চতুর্থ শ্রীলঙ্কা, পঞ্চম তুরস্ক, ষষ্ঠ ভিয়েতনাম, সপ্তম ইন্দোনেশিয়া, অষ্টম বাংলাদেশ, নবম উগান্ডা এবং দশম অবস্থানে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা।

ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি (আইটিসি) প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে চা উৎপাদনের সার্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চা খাতের উৎপাদন পরিসংখ্যান পর্যালোচনাকারী শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীন ২০২২ সালে ৩১৮ কোটি ১০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করেছে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

একই বছর ভারত ১৩৬ দশমিক ৫ কোটি কেজি বা ২১ দশমিক ১ শতাংশ, কেনিয়া ৫৩ দশমিক ৫ কোটি কেজি বা ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ, তুরস্ক ২৪ দশমিক ৬ কোটি কেজি বা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১২ দশমিক ৫ কোটি কেজি বা ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৪ কোটি কেজি বা ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ, উগান্ডা ৭ দশমিক ১ কোটি কেজি বা ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং আর্জেন্টিনা ৭ দশমিক ১ কোটি বা ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ চা উৎপাদন করে।

২০২৩ সালে চা উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙে বাংলাদেশ। ওই বছর ১০ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয় দেশে। তার মধ্যে পৌনে দুই কোটি কেজি চা আসে পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানগুলো থেকে

যদিও এক দশক আগে চিত্রটি ছিল ভিন্ন। ২০১৩ সালের আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষ ১০ চা উৎপাদনকারী দেশের এলিট তালিকার বাইরে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ দশম অবস্থানে উঠে আসে। এরপর বাংলাদেশের চা উৎপাদন বাড়ানো ও চাহিদা অনুপাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। ২০১৬ সালে চা নীতিমালা ঘোষণা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের ওই নীতিমালা ও নানামুখী পরিকল্পনা বাংলাদেশকে চা উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে তুলে এনেছে।

চা নীতিমালা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ কোটি কেজি। মূলত দেশীয় চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদনের এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এবং পরবর্তীসময়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে চায়ের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। এতে রপ্তানিতেও ভাটা পড়ে।

অন্যদিকে, উৎপাদন বাড়লেও সে অনুপাতে ভোগ বা চাহিদা না বাড়ায় চায়ের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ বাগান মালিকরা। তাদের অনেকে উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগ হারাচ্ছেন।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে তিন কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হতো। ২০০১ সালে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজিতে। একই বছর রপ্তানি হয় এক কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার কেজি। ওই বছর এই অর্থকরী ফসলটি রপ্তানি করে ৮৯ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি।

আরও পড়ুন

রেকর্ড উৎপাদনের পরেও দেশে বাড়ছে আমদানি, কমছে রপ্তানি ১৮০ বছর আগে যেভাবে চা এলো দেশে

পরবর্তীকালে ২০০৮ সালে রপ্তানি কমলেও এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ে। ওই বছর দেশে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হলেও রপ্তানি হয়েছিল ৮৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। অপেক্ষাকৃত ভালো মানের চা রপ্তানির কারণে সে বছর রেকর্ড ৯৭ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছিল বাংলাদেশ।

তবে পরের বছর ২০০৯ সালেই চা রপ্তানিতে ধস নামে। ওই বছর পাঁচ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। কিন্তু রপ্তানি হয় ৩১ লাখ ৬০ হাজার কেজি। এতে রপ্তানি আয় আসে ৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পরের বছরগুলোতে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানি নামে তলানিতে।

সর্বশেষ গত বছর (২০২৩) চা উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙে বাংলাদেশ। ওই বছর ১০ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয় দেশে। তার মধ্যে পৌনে দুই কোটি কেজি চা আসে পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানগুলো থেকে। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি অতিক্রম করে।

উৎপাদনে রেকর্ড গড়লেও ২০২৩ সালে মোট চা রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি। দুই যুগের ব্যবধানে তা কমে ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। গত বছর বিদেশে চা পাঠিয়ে ২৭ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করেছে দেশ। মূলত, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় চা রপ্তানির তুলনায় বিগত বছরের চেয়ে আর্থিক হিসাবে টাকা বেশি আয় হয়েছে।

এর আগে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালে। সে বছর দেশের সব বাগান মিলিয়ে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এখন সেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড ২০১৯ সালে। ওই বছর চা উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে ১৬৮টি বাগান থেকে। অথচ ১৯৭০ সালে ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর বাগানে উৎপাদিত হতো ৩ কোটি ১৩ লাখ কেজি। ২০২৩ সালে আবাদ হয়েছে ৬২ হাজার ৭৩৪ হেক্টরে। বাগান ১৬৮টি। ২০২০ সালে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি, ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার কেজি এবং ২০২২ সালে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়।

দেশে উৎপাদিত চা উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও আমদানিনির্ভরতা কমছে না। চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দুই লাখ ৮৮ হাজার কেজি চা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। চা বোর্ড সূত্র বলছে, গত ২২ বছরে অন্তত ১৭ গুণ কমেছে রপ্তানি। ২০০১-০২ অর্থবছরে চা রপ্তানি হয়েছিল এক কোটি ৩৮ লাখ দুই হাজার কেজি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আট লাখ ২৬ হাজার কেজিতে নেমেছে।

অপেক্ষাকৃত ভালো মানের চেয়ে নিম্নমানের চা বেশি উৎপাদনের কারণে উৎপাদকরা রপ্তানির মাধ্যমে লাভবান হতে পারছেন না। ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের বিপুল চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে

চা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর চা বোর্ডের নানা নীতিগত পদক্ষেপের ফলে উৎপাদন বেড়েছে। বিশেষত পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর বৃহৎ চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানগুলোতে উৎপাদন বাড়ছে। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বর্তমানে দেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৮টি। এছাড়া বর্তমানে তিনটি চা নিলাম কেন্দ্র রয়েছে চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) নূরুল্লাহ নূরী জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে চা চাষ শুরু করে। তখন এ অঞ্চলের চা-শিল্প বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল। ওই সময়ে চা পানের অনুপাতে রপ্তানিই হতো বেশি। দেশে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সমৃদ্ধির কারণে চায়ের ভোক্তা বাড়লে চাহিদাও বাড়তে থাকে। এতে একসময় রপ্তানিতে লাগাম টেনে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো প্রধান হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন

চায়ের উৎপাদন বাড়লেও কমছে রপ্তানি চা পানে যেভাবে অভ্যস্ত হলো বাঙালি

‘সময়ের ধারাবাহিকতায় দেশীয় চা-শিল্পকে সরকারিভাবে সুরক্ষা দেওয়ায় উৎপাদন বেড়ে বর্তমানে বিশ্বের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিক পরিকল্পনায় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় আরও ওপরের দিকে ওঠার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের’- বলেন চা বোর্ডের এ সদস্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চা-শিল্প এখন দেশীয় ভোগনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বের অন্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এছাড়া অপেক্ষাকৃত ভালো মানের চেয়ে নিম্নমানের চা বেশি উৎপাদনের কারণে উৎপাদকরা রপ্তানির মাধ্যমে লাভবান হতে পারছেন না। ভালো মানের চা উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের বিপুল চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের বাগানগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টায় প্রতি বছর বাড়তি চা উৎপাদন করছে। উদ্যোক্তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রশংসার দাবি রাখে। শ্রমিকদের মজুরি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চায়ের ‘কস্ট অব প্রোডাকশন’ বা উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

নিলাম কেন্দ্রগুলোতে চায়ের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে এখনো অনেক বাগান লোকসানে চা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা।

‘সরকার সম্প্রতি চায়ের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছে। তা-ও উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিশেষত চা-শিল্প খাত বৃহৎ বিনিয়োগের জায়গা। এখানে ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে। এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করবে না। এতে বর্তমানে খুঁড়িয়ে চলা বাগানগুলো আগামী দিনে আর এগোতে পারবে না। অনেক মালিক বাধ্য হয়ে তখন বাগান বন্ধ করে দেবেন। যার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশীয় চা শিল্পে।’

কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চায়ের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যেন বাগান মালিকরা কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারেন। যেন তারা উৎপাদনে উৎসাহ পান। তবেই বাংলাদেশের চা-শিল্প খাত আরও বিকশিত হবে।

এছাড়া চা বোর্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আহরণকারী অর্থকরী এ ফসলটি জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি।

এমডিআইএইচ/এমকেআর/এএসএম