ধর্ম

পুরুষের বুক ও পিঠের লোম তুলে ফেলা কি জায়েজ?

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী শরীরের লোম তিন ভাগে ভাগ করা যায়। কিছু লোম কাটা বা তুলে ফেলা নিষিদ্ধ, কিছু লোম নিয়মিত খাটো করা বা তুলে ফেলার নির্দেশ রয়েছে, কিছু লোমের ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই অর্থাৎ চাইলে রাখা যায়, আবার তুলেও ফেলা যায়।

Advertisement

প্রথম প্রকারের লোম যেগুলো মুণ্ডানো বা তুলে ফেলা নিষিদ্ধ সেগুলো হলো পুরুষের দাড়ি, ভ্রু এবং নারীদের ভ্রু। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَىতোমরা গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। (সহিহ বুখারি: ৫৮৯২, সহিহ মুসলিম: ৬২৫)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) ভ্রু উপড়ে ফেলা, দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করা ইত্যাদি রূপচর্চাকে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বিকৃতি গণ্য করে এগুলো যারা করে তাদের অভিশপ্ত বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন,

Advertisement

لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُوتَشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّআল্লাহ ওই সব নারীকে লানত করেছেন, যারা উল্কি অঙ্কন করে বা করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ উপড়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে; এরা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটিয়েছে। (সহিহ বুখারি: ৪৮৮৬)

দ্বিতীয় প্রকারের লোম যেগুলো নিয়মিত শেভ করতে হয়, কাটতে হয় বা তুলে ফেলতে হয়। যেমন শ্রোণীদেশ ও বগলের পশম, পুরুষের গোঁফ ইত্যাদি। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ الاِسْتِحْدَادُ وَالْخِتَانُ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ

পাঁচটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত; নাভির নিচের চুল শেভ করা; খাতনা করা, গোঁফ ছাঁটা, বগলের লোম তুলে ফেলা এবং নখ কাটা। (সুনানে তিরমিজি: ২৭৫৬)

Advertisement

তৃতীয় প্রকারের লোম যেগুলোর ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ বর্ণিত নেই। এগুলো রাখা যায়, কেউ কাটলে, মুণ্ডন করলে বা উপড়ে ফেললেও গুনাহ নেই। পুরুষের হাত, পা, বুক ও পিঠের লোম তৃতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। কেউ চাইলে রাখতে পারে, ফেলেও দিতে পারে।

তবে বুক-পিঠের লোম যেহেতু পুরুষের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, তাই বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকলে এই লোম রেখে দেওয়াই ভালো। আল্লাহর রাসুলের (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুকে লোম ছিল এবং তিনি এই লোম ফেলতেন বলে জানা যায় না। বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন,

ﺭﺃﻳﺖ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﻡ اﻟﺨﻨﺪﻕ، ﻭﻛﺎﻥ ﻛﺜﻴﺮ ﺷﻌﺮ اﻟﺼﺪﺭ ﻭﻫﻮ ﻳﺮﺗﺠﺰ ﺑﺮﺟﺰ ﻋﺒﺪ اﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺭﻭاﺣﺔখন্দকের যুদ্ধের দিন আমি নবিজিকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখলাম, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার (রা.) কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর তাঁর বক্ষদেশে অনেক পশম ছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ২৬০৬৯)

ওএফএফ/এএসএম