নিখোঁজ এমপি আনারের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা

ভারতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের এখনো কোনো সন্ধান মেলেনি। তার সন্ধানে ভারতীয় পুলিশ কাজ করছে। সোমবার (২০ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সন্ধান না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

রোববার (১৯ মে) এমপির নিখোঁজের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হয়। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে শত শত নেতাকর্মী তার খোঁজ জানতে ভিড় জমান।

অন্যদিকে এমপি আনারের সুস্থতা কামনায় বিভিন্ন স্থানে দোয়া প্রার্থনা করেছেন রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

গত ১২ মে রোববার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান বলে জানান তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ। এরপর প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটসআপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়িচালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার।

এরপর থকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানান উদ্বিগ্ন পরিবার।

এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপির পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় পুলিশকে জানানো হয়। এমপি নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে দু’দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ।

এদিকে বাবার খোঁজে রোববার বিকেলে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান।

গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুনর রশীদ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এমপি আনারের খোঁজে ভারতীয় পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন।

নিখোঁজ এমপির সর্বশেষ তথ্য জানতে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এমপি কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সোমবার ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আশা করছেন মঙ্গলবার ভিসা পেতে পারেন। ভিসা পেলে ডরিন বাবার খোঁজে ভারতে রওনা দেবেন।

কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, পাঁচদিন পার হয়ে গেলো, এমপির কোনো খবর পাচ্ছি না। কোথায় গেলো, কী করছে, বেঁচে আছে কি না, এসব চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ইন্ডিয়াতো ছোট দেশ না। কোথায় কী হলো বুঝতে পারছি না। আপনারা সবাই দোয়া করেন আমাদের এমপি যেন সুস্থ শরীরে ফিরে আসেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এমপির খোঁজ নিতে আসা মো. মিন্টু বলেন, আমরা এমপি সাহেবকে খুব ভালোবাসি। সুখে-দুঃখে সব সময় তাকে আমরা পাশে পাই। নিউজে দেখলাম তিনি ভারতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা খুব চিন্তিত। এজন্য তার কোনো সন্ধান পাওয়া গেলো কিনা এটা জানতে এখানে এসেছি। কিন্তু তার কথা কেউ বলতে পারছেন না। দোয়া করি এমপি আনার যেন সুস্থভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ রনি লস্কার বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সেজন্য আমরা নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে অবস্থান করছি কখন এমপির সন্ধান মেলে এ অপেক্ষায়।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/জেআইএম