আন্তর্জাতিক

আকাশ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও যেসব নেতা

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তারাও। গত রোববার (১৯ মে) থেকে এ নিয়েই তোলপাড় বিশ্বের গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

Advertisement

তবে আকাশপথে দুর্ঘটনায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও প্লেন বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ রাজনীতিবিদরা।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকজনের নাম-

১. আরভিড লিন্ডম্যান, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৬)সুইডিশ রিয়ার অ্যাডমিরাল এবং সুইডেনের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী স্যালোমন আরভিড আচেটস লিন্ডম্যান একজন প্রভাবশালী রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর এক মর্মান্তিক প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। ওইদিন ঘন কুয়াশার মধ্যে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয় লিন্ডম্যানকে বহনকারী ডগলাস ডিসি-২ মডেলের প্লেনটি।

Advertisement

আরও পড়ুন>>

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আর কে কে ছিলেন? কীভাবে বিধ্বস্ত হলো ইরানি প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার?

২. র‌্যামন ম্যাগসেসে, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট (১৯৫৭)ফিলিপাইনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট র‌্যামন ম্যাগসেসে তার কঠোর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান এবং জনতাবাদী আবেদনের জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ সেবু শহরের মাউন্ট মানুংগালে বিধ্বস্ত হয় তাকে বহনকারী প্লেন। ওই দুর্ঘটনায় ২৫ জন আরোহীর মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে ছিলেন।

৩. নেরেউ রামোস, ব্রাজিলের প্রেসেডন্ট (১৯৫৮)ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছুদিনের জন্য সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন নেরেউ রামোস। ১৯৫৮ সালের ১৬ জুন প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। তাকে বহনকারী প্লেনটি পারানা রাজ্যের কুরিটিবা আফনসো পেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল।

৪. আবদুল সালাম আরিফ, ইরাকের প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬)ইরাকের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আবদুল সালাম আরিফ ১৯৫৮ সালের বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা দেশটি থেকে রাজতন্ত্র উৎখাত করেছিল। ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল ইরাকি বিমানবাহিনীর একটি প্লেন বসরার কাছে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন তিনি।

Advertisement

৫. হামবার্তো দে আলেনসার কাস্তেলো ব্রাঙ্কো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট (১৯৬৭)ব্রাজিলের ২৬তম প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সামরিক স্বৈরশাসনের প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন হাম্বারতো দে অ্যালেনসার কাস্তেলো ব্রাঙ্কো। ১৯৬৭ সালের ১৮ জুলাই নিহত হন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তাকে বহনকারী পাইপার পিএ-২৩ অ্যাজটেক প্লেন ব্রাজিলীয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ প্লেনের সঙ্গে মাঝ আকাশে সংঘর্ষে জড়ায়। ব্রাঙ্কোর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু ছিল।

আরও পড়ুন>>

ইরানি প্রেসিডেন্টের মরদেহ উদ্ধার কপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানি প্রেসিডেন্ট নিহত, মুসলিম বিশ্বে শোক প্রেসিডেন্ট রাইসির বর্ণাঢ্য জীবন

৬. সঞ্জয় গান্ধী, ভারতীয় রাজনীতিবিদ (১৯৮০)ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র ও কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী ১৯৮০ সালের ২৩ জুন নিহত হন। তার প্লেন দিল্লির সফদরজং বিমানবন্দরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সঞ্জয়ের জীবনাবসান ঘটে।

৮. রশিদ কারামি, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী (১৯৮৭)লেবাননে ধারাবাহিকভাবে সর্বাধিকবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন রশিদ কারামি। ১৯৮৭ সালের ১ জুন বৈরুত যাওয়ার পথে তার হেলিকপ্টারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারামি নিহত হন, আহত হন আরও কয়েকজন আরোহী।

৮. মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট (১৯৮৮)পাকিস্তানের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট নিহত হন। তার সি-১৩০ হারকিউলিস প্লেন বাহাওয়ালপুর থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। এর পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে নাশকতা পর্যন্ত নানা তত্ত্ব ছড়িয়েছে। কিন্তু প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ আজও রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।

৯. মাধবরাও সিন্ধিয়া, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস নেতা (২০০১)মাধবরাও সিন্ধিয়া ভারতের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালর ৩০ সেপ্টেম্বর প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। উত্তর প্রদেশের ময়নপুরীর কাছে তার ব্যক্তিগত বিচক্র্যাফট কিং এয়ার সি৯০ প্লেনে মাঝ আকাশে আগুন ধরে গিয়েছিল।

১০. সেবাস্তিয়ান পিনেরা, চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট (২০২৪)চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিমেরা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিহত হন। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার দক্ষিণ চিলির একটি হ্রদে বিধ্বস্ত হয়েছিল। পিমেরা চিলির রাজনীতিতে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সূত্র: এনডিটিভিকেএএ/