দেশজুড়ে

মরাগাছ তুমি কার!

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা-নাচোল সড়কের দুই পাশে দীর্ঘদিন ধরেই দাঁড়িয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি সরকারি গাছ। হালকা বাতাস হলেই গাছের ডাল ভেঙে মানুষের মাথায় পড়ে। এতে মারাও গেছেন একজন। তাই স্থানীয়দের দাবি দ্রুত অপসারণ করা হোক গাছগুলো।

Advertisement

সম্প্রতি সড়কের দুই পাশের গাছগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেয় জেলা পরিষদ। তবে এতে বাঁধ সেধেছে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। বিএমডিএর দাবি, সড়কের পাশে থাকা গাছগুলো তাদেরই। দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিঠি চালাচালিতে এখন মরা গাছগুলোর অপসারণ কার্যক্রম আটকে আছে। এতে ক্ষুব্ধ আমনুরা এলাকার সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগে এই মরা গাছগুলো পড়ে আমনুরা শুকানদিঘী এলাকায় আনোয়ারা নামে একগৃহবধূর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই রাস্তার পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের দাবি ওঠে। দীর্ঘদিন পর অপসারণের কাজ শুরু করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় অপসারণযোগ্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। যথাযথ প্রক্রিয়ায় সদর উপজেলার আমনুরা এলাকার রাস্তার পাশে থাকা ২৫৮টি মরা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ নিলাম হয়। এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে বন বিভাগ।

Advertisement

সর্বোচ্চ দরদাতার সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর গাছ অপসারণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপরই গাছ অপসারণ শুরু করে ঠিকাদার। আর তখনই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাছগুলো নিজেদের দাবি করলে নিলাম প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। পরে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি অপসারণযোগ্য গাছ কাটা বন্ধ করতে জেলা পরিষদকে চিঠি দেয়।

জেলা পরিষদের গাছ নিলাম সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখা গেছে, ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তার পাশে থাকা মরা ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে নিতে জেলা পরিষদকে অনুরোধ করেছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ)। বিধি অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ নিলাম করে জেলা পরিষদ। চিঠির মাধ্যমে এই তথ্যটি শুরু থেকেই অবগত বিএমডিএ। তখনও প্রতিষ্ঠানটি নীরব ছিল।

গাছ নিলাম প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ১৯৮৯-৯০ সালে সড়কের ধারে গাছগুলো রোপণ করে জেলা পরিষদ।

আমনুরা-কেন্দুল এলাকার বাসিন্দা মনিমুল হক তুফান বলেন, সড়কের গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এখন ঝড়-বৃষ্টি হলে মরা গাছের ডাল ভেঙে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। কিছু গাছ কাটা হলেও, এখন বন্ধ আছে। অবশিষ্ট গাছগুলো দ্রুত অপসারণ না হলে আবারো যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি।

Advertisement

বেশ কিছুদিন আগে এই গাছের ডাল পড়ে মারা যান ওই এলামার আনোয়ারা বেগম। আনোয়ারা বেগমের মেয়ে আসমা খাতুন বলেন, গত তিন বছর আগে বিকেলে হঠাৎ দমকা হাওয়া উঠেছিল। এসময় গরু আনতে বাইরে গিয়েছিলেন আমার মা আনোয়ারা। পরে দমকা হাওয়ায় একটি মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আমার মায়ের মৃত্যু হয়। তাই আমরা দ্রুত এই মরা গাছগুলোর অপসারণ চাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দিন বলেন, ভূমিসহ গাছের মালিক জেলা পরিষদ। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় জেলা পরিষদের কোনো ত্রুটি নেই।

তিনি আরও বলেন, বিএমডিএ এখন গাছগুলোর মালিকানা দাবি করছে। তাদের যথাযথ প্রমাণ দিতে বলা হয়। কিন্তু গাছেগুলো তারা রোপণ করেছে এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তবে এখনো যদি তারা প্রমাণ দিতে পারে আমরা তাদের চুক্তি অনুযায়ী ভাগ বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু তারা সমঝোতায় না এসে শুধু অভিযোগ করছে। আর অকারণে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুন রশীদ বলেন, ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে রাস্তার ধারে গাছগুলো রোপণ করা হয়। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে ওই গাছ বিক্রি করে দিয়েছে জেলা পরিষদ। গাছগুলো রোপণ করার কোনো প্রমাণ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমডিএর এই কর্মকর্তা বলেন, দুই দপ্তরের চুক্তি হয়েছে। তবে এই চুক্তির কাগজ আপনাকে দেওয়া যাবে না।

এফএ/এমএস