পাহাড়, গুহা, ঝরনা ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম সোনাইছড়া ট্রেইল। মিরসরাইয়ের অন্যান্য পর্যটন স্পটের মতো এটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও এখানে ছুটে যাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ছুটির দিনেই পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
Advertisement
জানা গেছে, বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত মিরসরাই উপজেলার হাদিফকিরহাট বাজার হয়ে সোনাইছড়া ট্রেইল অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। পিচ্ছিল ঝিরিপথ, খাড়া পাহাড় ও বাদুইজ্জাখুম পার হয়ে যাওয়ার সময় যে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়, সেই অভিজ্ঞতা সারা জীবনের এক অনন্য সঞ্চয়।
এই ট্রেইলে দেখবেন নানা রকমের গাছের পাতা, পশু-পাখি, সঙ্গে স্বচ্ছ পানি। প্রকৃতির রূপ কতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত তা আগে যারা এই ট্রেইল ভ্রমণ করেনি, তারা জানবে না। ট্রেইলটা সোনাইছড়ি নামে পরিচিত। তবে শুরুতেই দেখবেন বাদুইজ্জাখুম, যা এই ট্রেইলের অন্যতম আকর্ষণ।
বেশ কিছুটা সময় চড়াই-উতরাই। সেখানে হাজার হাজার বাদুরের ওড়াউড়ি। ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝখানে সামান্য ফাঁকা করে দু’পাশে উঠে গেছে খাড়া পাহাড়। গুহার ভেতর দিয়ে বহমান পানির ধারা।
Advertisement
সরু গুহার ভেতর সাঁতরে গিয়ে দেখবেন এক ফালি আলোয় যৌবনা ঝরনাধারা। উচ্ছ্বাস আর অপ্রত্যাশিত ঝরনার সৌন্দর্য দেখে যারপরনাই আনন্দে বিগলতি হবেন।
এরপর কিছুটা পথ ঘুরে এসে আবারো হাইকিং-ট্র্যাকিং। একের পর এক বেশ বড়সড় পাথুরে বোল্ডার অতিক্রম করতে হবে। চলতি পথে অনেক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যে চোখ আটকায়। কখনো কখনো সেসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য থমকে দাঁড়াবেন।
চলতে চলতে ছোট-বড় কিছু ক্যাসকেড, ঝিরি ও বুনোপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন সোনাইছড়া ঝরনায়। এর উচ্চতা খুব বেশি নয়। বড়জোড় ৪০-৫০ ফুট হবে। তবে এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। ইচ্ছেমতো গা ভেজাতে ভেজাতে আড্ডাও চলবে সমানতালে।
আরও পড়ুন
Advertisement
পাহাড়-পর্বত, ঝরনা, বৈচিত্রময় প্রকৃতি কী নেই সেখানে! গহিন পাহাড়ে কতটা রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে, তা সেখানে না গেলে অজানাই রয়ে যাবে। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় ও সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়া। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে এখানে ঝরনা আছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের কারণে এখন লোকজন সেখানে ছুটছেন। সোনাইছড়া এমন একটা রোমাঞ্চকর ট্রেইল, যেখানে এক ট্রেইলে গুহা, ঝরনা ও পাহাড় ট্র্যাকিংয়ের আনন্দ উপভোগ করা যায়।
ঘুরতে আসা প্রান্তিক ভৌমিক বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝরনা এলাকা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই। কোনো দিন আসা হয়নি। অথচ বাড়ির পাশে এমন চমৎকার অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা এতদিন মিস করেছি। তিনি আরও জানান, ওইদিন বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপের প্রায় ১৭০ জন্য সদস্য এই ট্রেইলে বেড়াতে আসেন।
কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো গাড়িতে উঠে নামতে হবে মিরসরাই উপজেলার হাদিফকিরহাট বাজারে। সেখানে নামার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যটারিচালিত রিকশা নিয়ে রেললাইন পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া যাবে।
নিজস্ব রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন। রেললাইনের পর থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। রেললাইন হতে সব মিলিয়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরে আসা সম্ভব।
থাকা ও খাওয়া
সেখানে থাকার জন্য খুব বেশি আবাসিক হোটেল নেই। পার্শ্ববর্তী বড়তাকিয়া বাজারে দুটি আবাসিক হোটেল আছে। এছাড়া সীতাকুণ্ডে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে।
খাওয়ার জন্য রেললাইনের পাশে জয়নালের হোটেল আছে। এছাড়া হাদিফকিরহাট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কমলদহ বাজারে আছে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল। সেখানে অনায়াসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন।
এমএমডি/জেএমএস/এমএস