দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে এবার লিচুর আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হয়েছে। এছাড়া লিচু ফেটে যাওয়াসহ পোড়া ক্ষত দেখা যাচ্ছে লিচুর গায়ে। এ অবস্থায় কী করণীয় বুঝতে না পেরে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন চাষি ও বাগানিরা।
Advertisement
গত কয়েক বছর শিলাবৃষ্টি ও করোনার বড় প্রভাব পড়ে লিচুর ওপর। লিচু ঝরে পড়ায় স্বপ্নভঙ্গ হয় বাগানি ও ব্যবসায়ীদের। গত মৌসুমে কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করেন বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহে লিচুতে পোড়া দাগ ও ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। চলতি মৌসুমের শুরুতে মুকুলের সমারহ ও পরে গুটি দেখে আশায় বুক বাঁধেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহে প্রথমে লিচুর গুটি ঝরতে শুরু করে। মাঝে বৃষ্টিতে লিচু ঝরে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আবারো তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অপরিপক্ব লিচু লাল রঙ ধারণ করে ফেটে যাচ্ছে। এতে করে আবারো লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন বাগানি ও ব্যবসায়ীরা।
লিচুর জন্য বিখ্যাত সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, খানসামা, কাহারোল ও বোচাগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র রোদ ও গরমের কারণে লিচুর খোসা পুড়ে যেতে শুরু করেছে। অপরিপক্ব লিচু গরমের কারণে ফেটে যাচ্ছে। এতে বাজারে আসার মাত্র ১০-১৫ দিন আগে লিচুতে বিপর্যয় ও লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
কথা হয় বিরল উপজেলার লিচুচাষি রতন রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বাগানে লিচু পুড়ে গিয়ে ফেটে ঝরে পড়ছে। এবার বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন তিনি।
বিরল রবিপুর এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি রবিপুর ও মাধববাটি এলাকায় বাগান কিনেছেন। বাগানে বোম্বাই লিচু রয়েছে। চার দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে তার লিচু বাগানের সিংহভাগ লিচু রোদে পুড়ে গেছে। এখন ফেটে গিয়ে ঝড়ে পড়ছে। কোনো পাইকার লিচু কিনতে চাচ্ছেন না। তিনি লিচু নিয়ে এখন কী করবেন তা বুঝতে পারছেন না।
কাহারোল উপজেলার আমিনুল ইসলাম নামে এক বাগান মালিক বলেন, তার বাগানে অপরিপক্ব লিচু লাল হয়ে ফেটে যাচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি। চলমান তাপপ্রবাহে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এবার পর্যাপ্ত লিচু হয়েছে। খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কারণ ব্যাপকভাবে লিচুর পরিচর্যা করছেন মালিক ও বাগানিরা।
Advertisement
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় লিচুর চাষ হওয়া জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৭৮৭ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১০৭ হেক্টর বেশি। জেলায় লিচু বাগান রয়েছে পাঁচ হাজার ৪১৮টি। এবার দিনাজপুর জেলায় প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপান হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এফএ/এমএস