কোনো গল্প-উপন্যাস নয়, আবার কোনো থ্রিলার নাটক কিংবা সিনেমা নয়। বাস্তবে ভূত বা আত্মার বিয়ে দেখতে চলেছে মানুষ! ৩০ বছর আগে মেয়ের মৃত্যু হয়েছিল। মৃত সেই মেয়ের বিয়ে দিতে পাত্র চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছে পরিবার।
Advertisement
মেয়ের আত্মার জন্য উপযুক্ত পাত্রের আত্মার খোঁজ করা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। এই ঘটনা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেক। কেউ কেউ হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউ আবার বিষয়টিকে ভয়ঙ্কর বলছেন। কিন্তু আসলে ঘটনাটা কী?
চমকে দেওয়া এই বিজ্ঞাপনের ঘটনা মূলত ভারতের কর্ণাটকের। রাজ্যের দক্ষিণ কন্নড় জেলার পুত্তুরের৷ আত্মার বিয়ে দেওয়া ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের একটি ধর্মীয় রীতি। এই প্রথাকে স্থানীয়রা বলে থাকেন ‘কুলে মাদিমে’ অথবা ‘প্রেত মাদুভে’৷
আরও পড়ুন:
Advertisement
সপ্তাহ খানেক আগে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে ব্যতিক্রমী ওই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। যেখানে বর্ণ, গোত্রের উল্লেখ করে মৃত মেয়ের জন্য পাত্রের আত্মার খোঁজ করা হয়েছে। সেখানে এমন পাত্রের আত্মার দাবি করা হয়, যিনিও ৩০ বছর আগে মারা গেছেন।
বিজ্ঞাপন দেওয়া পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে তাদের একটি মেয়ে মারা যায়। তারপর থেকেই পরিবারটির সঙ্গে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা ঘটে আসছে। একপর্যায়ে প্রবীণদের কাছ থেকে উপদেশ ও নির্দেশনা চাইলে বলা হয়ে, এসব অসুবিধার পেছনে মৃত মেয়ের অস্থির আত্মার হস্তক্ষেপ থাকতে পারে। তাই পরিস্থিতি শান্ত করতে পরিবার থেকে মারা যাওয়া ওই মেয়েটির আত্মার বিয়ের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিবারটি আরও জানায় বিজ্ঞাপন দেখে কমপক্ষে পঞ্চাশ জন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আগ্রহীদের মধ্যে থেকে কোনো পাত্রকে পছন্দ হলেই রীতি পালনের জন্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
আরও পড়ুন:
Advertisement
পাত্রীর মা-বাবা বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো বিষয়টি নিয়ে অনেকে ঠাট্টা করবেন। যদিও তেমনটা ঘটেনি। এমনকি, অনেকেই এই বিশেষ রীতিটি সম্পর্ক জানতে চেয়ে ফোন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ মেলেনি।
‘কুলে মাদিমে’ অথবা ‘প্রেত মাদুভে’ রীতির উদ্দেশ্য হলো অবিবাহিত অবস্থায় মারা যাওয়া পরিবারের সদস্যদের অপূর্ণ ইচ্ছাপূরণ। পছন্দের পাত্র জুটলে জীবিতদের মতো সব নিয়ম মেনেই নাকি তাদের আত্মাদের বিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, মৃতদের বিয়ে দিলে জীবিতদের বিয়ের বাঁধাও দূর হয়।
পুত্তুরে অঞ্চলটি কর্ণাটকের তিনটি উপকূলীয় জেলা ও কেরালার পার্শ্ববর্তী কাসারগোদ জেলার অংশ জুড়ে বিস্তৃত যেখানকার স্থানীয় ভাষা টুলু। এই অঞ্চলে মৃত ব্যক্তির জন্য বিয়ের আয়োজন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
টুলুভা লোককাহিনী বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকে ও তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। ফলস্বরূপ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেহী আত্মার জন্য খাদ্য ও বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ