শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক হালিমা খাতুন ও তার স্বামী মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৪ মে) মামলাটি করেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান। চাকরি দেওয়ার নামে সাড়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলাটি করা হয়।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে ১৯ জন কর্মচারির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে সেখানে আবেদন করেন গোসাইরহাটের নাগেরপাড়া এলাকার খাদিজা আক্তার নুপুর ও তার ভাই নাজমুল হক। দুই ভাই বোনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২৪ লাখ টাকা নেন তৎকালীন গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক এবং উপজেলার তারুলিয়া এলাকার মোক্তার হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন।
পরে হালিমা খাতুন তৎকালীন জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে অফিস সহায়ক পদের দুটি ভূয়া নিয়োগপত্র তাদের হাতে তুলে দেন। ১ এপ্রিল তারা দুজন কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে তারা ৭ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
Advertisement
এছাড়াও হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে রুমা আক্তার হ্যাপি ও সুমন বেপারী নামের আরও দুজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে ২১ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজে, '২৪ লাখ টাকায় চাকরি, জয়েন করতে গিয়ে জানলেন নিয়োগপত্র ভুয়া' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
পরে অভিযোগের বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত করা হয়। তদন্তকালীন তাকে ডামুড্যা ইউএনও অফিসে বদলি এবং পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর হালিমাকে অফিস সহায়কের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনায় ২০২১ সালে ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে হালিমা খাতুন, তার বাবা আলী আহম্মেদ আকন ও তার স্বামী মুক্তার হোসেনকে আসামি করে জেলা আদালতে একটি প্রতারণার মামলা করেন।
Advertisement
অন্যদিকে ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলায় হালিমা খাতুন ও তার স্বামী মুক্তার হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি হালিমা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার বলেন, হালিমা আমাদের কাছ থেকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। আমাদের দুই ভাইবোনকে জাল নিয়োগপত্র দিয়েছিল। জয়েন করতে গেলে বিষয়টি বুঝতে পারি। আমরা জমি বিক্রি, গহনা বিক্রি ও মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে ওই টাকাগুলো দিয়েছিলাম। পরে তারা চাপের মুখে মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত দেয়। আমরা বাকি টাকা ফেরত চাই, পাশাপাশি প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে উপজেলা কার্যালয়ের এক অফিস সহায়ক ও তার স্বামী ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তাকে বরখাস্ত করেছেন। পরে দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ওই বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের কার্যালয়ে মামলাটি নথিভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিধান মজুমদার অনি/এনআইবি/জেআইএম