ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করে ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছেন আরিয়ান মুন্না ওরফে ওলিউল ইসলাম মুন্না। পড়াশোনার পাশাপাশি ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন তিনি। মুন্নার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। তার বাবা মো. কামাল হোসেন একজন ব্যবসায়ী। মা নাসিমা আক্তার গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মুন্না সবার বড়। ফিরোজা বাশার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ-প্লাস নিয়েই পাস করেন মুন্না। বর্তমানে ঢাকা কলেজ থেকে গণিত বিভাগে স্নাতক করছেন তিনি।
Advertisement
শুরুটা যেভাবে:১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮। মোবাইল দিয়ে প্রথম ভিডিও ফেসবুক পেজে আপলোড করেন মুন্না। তারপর টানা ৬ মাস মোবাইল দিয়েই ঘরে বসে ছোট ভিডিও তৈরি করা হয়। ভিডিওগুলোতে তিনি একাই অভিনয় করতেন। কিন্তু মোবাইলে তেমন কোনো সাফল্য না পেলে, ক্যামেরা দিয়ে শর্টফিল্ম স্টাইলে কাজ শুরু করেন তিনি।
মুন্না বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি খুব জেদি ছিলাম। তাই যখন যেটা মন চাইতো, সেটাই করতাম। ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট বানানোর ভূত যখন মাথায় চাপলো, তখন জেদ করেই এক দিনেই ক্যামেরাসহ ভিডিও করার সামগ্রী ও কম্পিউটার কিনে নিয়ে আসলাম। ক্যামেরাসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে আমার মা আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে কিনেছিলাম।
ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে চলা:আগে মুন্না একটা কোচিংয়ে ক্লাস নিতেন, টিউশনি করতেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের মুন্না এভাবেই নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালাতেন। কিন্তু ফেসবুক কনটেন্ট নির্মাণের নেশায় পড়ে সেসবই বাদ দেন। শুরু করার পর মুহূর্তেই মুন্নার আয় করার ব্যবস্থা একেবারেই শূন্য ছিল। আর এজন্যই সেই মুহূর্তে এতো টাকা ধার করে ক্যামেরা আর কম্পিউটার কেনাটা তার জন্য অনেক বড় ঝুঁকির কারণ ছিল। ধারের টাকা পরিশোধ করার কোনও রাস্তা সেই মুহূর্তে জানা না থাকলেও তিনি ঝুঁকি নিয়েই কাজটা চালিয়ে যান।
Advertisement
ক্যামেরায় প্রথম কাজ: এতোসব ঝুঁকি নিয়েই মুন্না যখন ক্যামেরা আর কম্পিউটার কিনে আনেন, তখনই শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারি করোনা। বেশ কয়েকদিন ঘরবন্দী থাকেন মুন্না। কিন্তু এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগে না। একদিকে আয় নেই। অন্যদিকে ঋণের চিন্তা। তবে একদিন হুট করে করোনার লকডাউনের মধ্যেই বাসা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বের হয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসার পাশের রোডেই প্রথম ভিডিও শুট করেন মুন্না। এটাই ছিল ক্যামেরা দিয়ে মুন্নার প্রথম ভিডিও।
নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাওয়া:প্রথম ভিডিও করার পর কয়েকমাস একেবারেই ঘরবন্দী থাকতে হয় মুন্নাকে। তারপর ২০২০ সালের শেষের দিকে যখন করোনার প্রভাব একটু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসলো, তখন শুরু হয় তার এগিয়ে চলা। মুন্না প্রথম যে ভিডিও আপলোড করেছিলেন, তা দুই মাসের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রায় ১০ লাখ ভিউ হয় সেই ভিডিওটি। এরপর মুন্না পরপর বন্ধুদের নিয়ে আরও কিছু ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেন, যার প্রায় সবকটিই গড় ভিউ ১০ লাখের ওপরে। এর ফলে অল্প দিনেই মুন্নার পেজ মনিটাইজেশন পায় এবং উপার্জন শুরু হয়। মুন্না কাজ শুরু করার প্রায় ৩ মাস পরে ফেসবুক থেকে টাকা পাওয়া শুরু করেন। তবে টাকা উত্তোলন করতে করতেই তার প্রায় ৬ মাস লেগে যায়। বর্তমানে মুন্নার ফেসবুক পেজের ফলোয়ার এক মিলিয়ন এবং ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা এক লাখ পার করেছে। অর্জন করেছেন ‘সিলভার প্লে’ বাটনও। তবে ইউটিউবের চেয়ে ফেসবুক ভিডিও কনটেন্ট থেকেই বেশি আয় হওয়ায় ফেসবুকেই কাজ করতে মনযোগ দেন মুন্না।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:মুন্নার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা বা পরিকল্পনা - একজন ভালো অভিনেতা হওয়া। নিজের প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়েই তরুণ প্রজন্মের মাঝে আরও ভালো ভালো সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। যারা পেশা হিসেবে ইউটিউব বা ফেসবুকে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের উদ্দশ্যে মুন্না বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউব খুবই সাধারণ জায়গা। কারণ এখানে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেখানে টাকা, সম্মান আর মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। তবে আপনাকে লেগে থাকতে হবে। শুরু করতে হবে। ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্যের দেখা পাবেন।’
জেএইচ/এএসএম
Advertisement