ভারতের ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করা, ভোগান্তি কমানো এবং চাপ কমাতে দুই বছর মেয়াদি ভিসা চালু বা দীর্ঘমেয়াদি ভিসার বিষয়ে দেশটির সাধারণ নির্বাচনের পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৪ মে) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ভিসা পেতে মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে সেজন্য ভিসা ব্যবস্থা আরও সহজ করার অনুরোধ করেছি। যেন মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে ভিসা পেতে পারে।
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা নিয়ে ভারত কী বলেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছি সে বিষয়ে তারা একমত। তারা বলেছেন- সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তাদের এতো বেশি লোড হয়, যা কখনো কখনো ওভারলোড হয়ে যায়। সেটা সামাল দিতে যা প্রয়োজন তা করতে হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন
২০২২ সালে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত ভারত-বাংলাদেশের ভিসা আরও সহজ হওয়া উচিত: হর্ষবর্ধন শ্রিংলাতিনি বলেন, আমি গত বছর রাজনৈতিক সফরে ভারতে গিয়েছিলাম। সে সময় ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি বলেছি।
ভিসার চাপ কমাতে ভারতে অনএরাইভেল ভিসা পেতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে নানক বলেন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের উদাহরণ হিসেবে সৌদি আরবের ভিসা অনেক সহজ করার কথা বলেছি৷ কাজেই আপনাদের (ভারতের) আগের জায়গায় থাকলে চলবে না।
তিনি বলেন, তাদের (হাইকমিশনারকে) বলেছি- আপনারা বলছেন ওভারলোড হচ্ছে। সেটা কমাতে আমাদের যে ভিসা দিচ্ছেন সেটা দুই বছর মেয়াদি দিলে লোড কম হতো। লোড কমাতে ভিসা দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। এ বিষয়ে হাইকমিশনার একমত হয়েছেন। তিনি বলেছেন আমরা চেষ্টা করছি। নির্বাচনের পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে পাটমন্ত্রী বলেন, ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের পর দুদেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, আলোচনা ফলপ্রসূ আসবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের পাটকলগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য আলোচনা করেছি। এরই মধ্যে ভারতের তিনটি কোম্পানি আমাদের তিনটি পাটকলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কারও কারও সঙ্গে আমাদের চুক্তিও হয়েছে।
আরও পড়ুন
লু’র সফরে ভিসানীতি-র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হবেনানক আরও বলেন, আমরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ পাটবীজ ভারত থেকে আমদানি করি। এজন্য আমরা তাদের মানসম্পন্ন পাট বীজ দিতে বলেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাটবীজ দিতে বলেছি। কোনোক্রমেই যেন তা বিলম্বিত না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে ভারতকে অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছি৷
তিনি বলেন, আমাদের চেয়ে ভারত সিল্কে অনেক বেশি এগিয়ে। সিল্ক উৎপাদনে ভারত পৃথিবীর শীর্ষে। এজন্য বাংলাদেশে মানসম্মত সিল্ক উৎপাদনে আমাদের কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছি। টেক্সটাইল খাতে দুদেশ একসঙ্গে কাজ করছি। এটি আরও জোরদার করতে উভয় দেশ একমত হয়েছে। আমাদের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছি। কারণ, আমাদের অনেকগুলো জুটমিল বন্ধ হয়ে আছে। সেগুলোকে আবার কর্মযজ্ঞে ফিরিয়ে আনতে চাই। এ বিষয়ে সোহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা করেছি।
পাটের বীজ উৎপাদন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না- এ প্রশ্নে নানক বলেন, পাট বীজ উৎপাদনে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিতে পাট অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশে একটি প্রজেক্ট চালু রয়েছে। যেন কৃষক পাটবীজ আরও বেশি করে উৎপাদন করে। এর মাধ্যমে আমরা পাটবীজের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারবো।
আরও পড়ুন
ডোনাল্ড লু’কে সরকার দাওয়াত দিয়ে আনেনি: কাদেররাজনৈতিক বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ভারতে নির্বাচন চলছে, আমরাও নির্বাচন করেছি৷ এ মুহূর্তে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দুদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে অনেকেই আনন্দে আধখানা হয়েছেন৷ ডোনাল্ড লু এসেছিলেন যেন তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর এবার ডোনাল্ড লু এসেছেন ভৌগলিক কারণে, যেখানে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া তিনি এসেছেন বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে সার্বিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে। আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
এমএএস/এমকেআর/এমএস