সমন্বিত পরিকল্পনায় এবার পটুয়াখালীতে বিস্তীর্ণ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখী আবাদ থেকে শুরু করে পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, মজুত, তেল উৎপাদন, তেল ও খৈল বাজারজাতকরণেও কৃষকেরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। ফলে বিগত বছরের চেয়ে এবার এসব সূর্যমুখী চাষে কৃষকেরা অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছেন। পটুয়াখালী ‘পল্লী প্রগতি সমিতি’ নামে একটি স্থানীয় এনজিও কৃষকদের এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে।
Advertisement
জানা যায়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামে এবার ১২০ বিঘা জমিতে একসাথে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন ৩৪ জন কৃষক। তাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশপাশি দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের বীজ ও জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট)। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশপাশি ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব বালাইনাশক। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলনও হয়েছে ভালো। তাই তো কৃষকদের মুখে এখন আনন্দের হাসি।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের ঝুঁকি অনেকটা কম। বিশেষ করে এটি লবণাক্ত এবং তাপসহিষ্ণু হওয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতেও এখন সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূর্যমুখী বীজের মানের ওপর বিবেচনা করে প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।’
আরও পড়ুনকোন গাছ কখন কোথায় রোপণ করতে হয়টমেটো চাষে ফিরোজের সাফল্য, ঝুঁকছেন অন্যরাস্থানীয় কৃষক মো. সামছু গাজী বলেন, ‘পাশপাশি সব জমিতে একই ফসল চাষ করায় সমস্যা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারছি। এতে কোনো রোগবালাই কিংবা সমস্যা হলে পরামর্শ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারছি। ভিন্ন ভিন্ন চাষাবাদ করলে বীজ, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে অনেক সময় নকল পণ্য কিনে প্রতারিত হতে হয়। পাশপাশি দাম নিয়ে ঠকতে হয়। তবে সমন্বিত চাষাবাদে সব কিছু একসঙ্গে করায় একটি বাড়তি শক্তি কাজ করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী ক্ষেতের নিরাপত্তায়ও সবাই কাজ করছি। ফলে এবার কেউ ফুল কিংবা বীজ নষ্ট করেনি।’
Advertisement
আছিয়া বেগম বলেন, ‘আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হতো। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে আমরা সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছি। এ ছাড়া সূর্যমুখী ভাঙানোর পর যে খৈল পাচ্ছি, তা গরুর খাবার হিসেবেও খাওয়ানো যাচ্ছে।’
পটুয়াখালী পল্লী প্রগতি সমিতি ভেলু চেইন ফেসিলেটর কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানামুখী সংকট থেকে কৃষকদের রক্ষা করার পাশপাশি আর্থসামাজিক পরিবর্তন আনতে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছি। সূর্যমুখীর পাশপাশি তারা যাতে সাথী ফসল হিসেবে কিছু সবজি চাষ করতে পারেন; সে জন্যও কৃষকদের বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকেরা এর ফলে আর্থসামজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তির সম্প্রসারণে আগ্রহী হবেন।’
আব্দুস সালাম আরিফ/এসইউ/জেআইএম
Advertisement