বাবা ভ্যান চালান আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। শত কষ্টের সংসার। এর মাঝেই এবার এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মেধাবী সামিয়া আক্তার। সে মাদারীপুর শিবচরের পাঁচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
Advertisement
পরিবার, বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে সামিয়ার বাবা আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া (৫৫) শিবচরের মাদবরচর এলাকার পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হন। পরে সেখান থেকে চলে আসেন শিবচরের পাঁচ্চর এলাকায়। পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকেন। আব্দুল লতিফ ভূইয়া একজন ডাক্তারের বাড়িতে কিছুদিন কেয়ারটেকারের কাজ করেন। তাতে যা বেতন পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। পরে ধার দেনা করে একটি ভ্যান কেনেন। বর্তমানে সেই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান।
এতে করেও সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। পরে সামিয়া মা রওশন আরা অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। সামিয়ার পাঁচ বোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ৩ বোনই লেখাপড়া করছে। এক বোন খাদিজা আক্তার শিবচর সরকারি বরমগঞ্জ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ছোট বোন ফারিয়া পাঁচ্চর গোয়ালকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
প্রতিবেশীরা জানান, সামিয়ার মা রওশন আরা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে শিবচরের বাখরের কান্দি গিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান। সামিয়ার বাবা ভ্যানচালক। দুইজনের উপার্জনের টাকা দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা ও সংসারের সব খরচ যোগাড় করতে কষ্ট হয় তাদের। সেখানে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে সামিয়া ভালো রেজাল্ট করায় আমরা খুব খুশি।
Advertisement
অদম্য মেধাবী সামিয়া আক্তার জানায়, আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক অভাব আর কষ্টের মধ্য থেকে লেখাপড়া করেছি। আমি জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।
সামিয়ার মা রওশন আরা বলেন, আমি এখন প্রায়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকি। তখন সামিয়াকেই সংসারের কাজ করতে হয়। অভাব অনটনের সংসার। আমার মেয়ে সামিয়া অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। অনেক সময় না খেয়েও স্কুলে যেতে হয়েছে। ঠিকমতো খাতা কলমও কিনে দিতে পারিনি। কলেজে ভর্তি কীভাবে করবো, কীভাবে ওর পড়াশুনার খরচ যোগাড় করবো, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সামিয়ার বাবা আব্দুল লতিফ ভুঁইয়া বলেন, আগামীতে কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পেলে আমার পক্ষে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করানোর সম্ভব হবে না। আমার স্ত্রী রওশন আরা অনেক অসুস্থ। আমি তার চিকিৎসাও চালাতে পারছি না। এরপর আবার তিন মেয়ের লেখাপড়র খরচ বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন, সামিয়া আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষায় সে মেধার পরিচয় দিয়েছে। সামিয়া এই বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
Advertisement
এফএ/জিকেএস