অর্থনীতি

বাড়তে পারে কোমল পানীয়র দাম

তীব্র তাপদাহ গরম আর মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের প্রভাবে পাল্টে গেছে দেশের কোমল পানীয়ের বাণিজ্য। খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫ ভাগ। আগে থেকে প্রস্তুতি না নেওয়ায় সময়মতো পণ্যের সরবরাহ দিতে হিমশিম অবস্থায় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের।

Advertisement

তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পণ্যটির ওপর ন্যূনতম কর হার বাড়ানো হতে পারে। এর ফলে দাম বাড়তে পারে ব্যাপক চাহিদা থাকা পণ্যটির। আর তা হলে তৃষ্ণা মেটাতে বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হবে ক্রেতাদের।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর হার ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। চলতি বছরের প্রাক বাজেটেও পণ্যটির ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে কোমল পানীয়র বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিদেশি কোম্পানির পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কোমল পানীয়র ও বিক্রি বেড়েছে। তবে এ পানীয় খাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়ছে। বেভারেজের ওপর গত বছরও এনবিআর ন্যূনতম করহার কমিয়েছিল। কিন্তু সেই সুফল জনগণ পায়নি। লাভবান হয়েছে ব্যবসায়ীরা। রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও স্বাস্থ্যঝুঁকি উভয় বিবেচনা করে বেভারেজ পণ্যটিতে করহার বাড়ানো হতে পারে।

Advertisement

এর আগে কোমল পানীয়র ওপর ন্যূনতম কর সর্বোচ্চ ১ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজেস, প্রাণ, আব্দুল মোনেম এবং কোকা-কোলা বাংলাদেশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগামী তিন থেকে চার বছরে এ খাতে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও স্থানীয় বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এ সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লোকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন কর হার বাড়ালে তা দেশের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে না। এতে কর আদায় বাড়ার পরিবর্তে কমতে পারে বলে আশংকা তাদের।

এদিকে কার্বোনেটেড বেভারেজ শিল্পের সামগ্রীক উন্নয়নে কর হার যৌক্তিক করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিল্ড)। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, এ খাতের দেশীয় বাজার সম্প্রসারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং রপ্তানি সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে একটি যৌক্তিক কর কাঠামো আগামী বাজেটের মাধ্যমে একটি নিদৃষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করা দরকার।

চিঠিতে বলা হয়, এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন। সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশানের মতে এ খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের মতো। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং উষ্ণ আবহাওয়ার করণে ভোক্তাদের কোমল পানীয় গ্রহণের হার অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে এ খাতের উন্নয়ন হলেও বৈশ্বিক অবস্থানে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে যা বিশ্ব বাজারের ০.২৭ শতাংশ মাত্র।

Advertisement

এ খাতের জন্য একটি যৌক্তিক দীর্ঘ মেয়াদী কর ব্যবস্থা এ শিল্পের আরও সম্প্রসারণ এবং এ খাত থেকে কর রাজস্ব আহরণ বাড়ানো সম্ভব। সঠিক নীতিমালা নেওয়া হলে এ ধরণের পণ্য রপ্তানিও সম্ভব।

এতে বলা হয়, এ খাতে করআরোপের ব্যাপারে কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন; নতুন আয়কর আইন ২০২৩ বস্তবায়নের পর ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে একধাপে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়, যদিও পরবর্তীতে একটি এস আর ও (এস আর এর মাধ্যমে এ হার ৩% নির্ধারণ করা হয়। ত কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান। দেখা যায়, যে ন্যূনতম কর হার প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি, কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক সমেত এ খাতের ওপর নিট কর হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রযোজ্য রয়েছে। যা পার্শবর্তী দেশ ভারত (৪০%), শ্রীলঙ্কা (২৯.২%), নেপাল (৩৮.৪৩%) এবং ভুটানে (৩০%) এর তুলনায় বেশি।

চিঠিতে বিল্ড জানায়, এ খাতের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কর কাঠামো প্রণয়ন করা দরকার যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একটি গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি বেভারেজ কোম্পানিগুলো মুনাফা করতে পারছে না ফলে ৩ শতাংশ হারে ন্যূনতম কর দিচ্ছে।

যৌক্তিক সম্পূরক এবং আমদানি শুল্ক এবং মিনিমাম ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে তাদের বিক্রি বাড়বে এবং ক্রমান্বয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দিতে সক্ষম হবে।

এসএম/এমআইএইচএস/জিকেএস