সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট উতরে যায়নি, আরও গভীর হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Advertisement
রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের পূর্বে বহু নেতাকর্মীকে একতরফা সাজা দিয়েছে আদালত। এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে বিএনপি। বিনা শুনানিতেও সাজা দিয়েছে সরকার। এখনো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে রয়েছেন। চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সাজা দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: ফখরুল আওয়ামী লীগ নয়, দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি: ফখরুলতিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণ করতে ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসার স্থল হচ্ছে কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
৫২৭টি ভারতীয় পণ্যে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি দেশেরই উচিত, নিজ নিজ দেশে আমদানি পণ্য পৌঁছার পর পণ্যের নিরাপত্তা মান পরীক্ষা করা। আমদানি করা পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছানো মাত্রই জনগণের ক্রয়ের জন্য বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এর আগেও ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ১২১টি ভারতীয় পণ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তারপরও পণ্যের উৎস দেশটি এই পণ্যগুলো ত্রুটিমুক্ত করার জন্য জন্য কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
মির্জা ফখরুল, হংকং এবং সিঙ্গাপুর তাদের দেশে ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসের গুঁড়া মসলা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সিঙ্গাপুরও দেশটির বাজার থেকে এভারেস্টের গুঁড়া মসলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে। হংকং ভারতীয় দুই কোম্পানির গুঁড়া মসলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড শনাক্ত হওয়ার পর দেশ দুটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে সভা মনে করে, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা পণ্যের মান যাচাই করে নেওয়া। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য বাজারে ছাড়া উচিত নয়।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটি ব্যর্থরাষ্ট্র। সরকার পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুস ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা টাকা পাচার করে সেটি বিনিয়োগ করেছে বিদেশে। অথচ বাংলাদশের মানুষের অবস্থা খারাপ।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এটি বললে আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। কিন্তু এটি সত্য। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। সার্বক্ষণিক মেডিকেল পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
মার্কিন সহকারি মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কে এলো তাতে ইন্টারেস্ট নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। সরকার মনে করছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট আরও বেড়েছে।
কেএইচ/এমএইচআর/এমএস