আইন-আদালত

জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই জি এম কাদেরের

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের দায়িত্ব পালনের বিরুদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে চেম্বার জজ আদালতের আদেশ বহাল রইল আপিলেও। এতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।

Advertisement

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (১২ মে) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া রুল নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

আদালতে এদিন জি এম কাদেরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ। অপরদিকে ছিলেন অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা।

এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের দায়িত্ব পালনে আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন জিএম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।

Advertisement

আরও পড়ুন

জিএম কাদেরকে শত কোটি টাকার লিগ্যাল নোটিশ

এ সংক্রান্ত বিষয়ে জি এম কাদেরের রিভিশন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়।

আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইনসান উদ্দিন শেখ। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মামুনুর রশিদ।

শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, নিষেধাজ্ঞা বাতিল চেয়ে জিএম কাদেরের আপিল গত ১৯ জানুয়ারি নামঞ্জুর করেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

Advertisement

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে নিষেধাজ্ঞার ওই আদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। মামলার বাদী ও জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধাকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বাদীপক্ষ। চেম্বার জজ আদালত নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তারই ধারাবাহিকতা আজ সেটি শুনানির জন্য উঠে।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া। ওই আদেশের ফলে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল ছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন জি এম কাদের।

এর আগে ৪ অক্টোবর দলে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা।

এরপর জিএম কাদের যাতে জাপার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন সে বিষয়ে ৩০ অক্টোবর (২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের গঠনতন্ত্রের আলোকে) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। পরে এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জিএম কাদেরের করা আবেদন ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেন একই আদালত।

এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মিস আপিল করেন জিএম কাদের। জেলা জজ আবেদন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। পরে শুনানির আদেশ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করলে ২৪ নভেম্বর জেলা জজ আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করেন জি এম কাদের। পরে ২৯ নভেম্বর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৩০ অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞার আদেশ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।

এরপর জিয়াউল হক মৃধা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় এটি আপিল বিভাগে শুনানি হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর হাইকোর্টে একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জিএম কাদের।

এরপর ৫ মার্চ গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর বাদী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন। অন্যদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকেও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন।

এফএইচ/এসআইটি/এমএস