হজের মৌসুমে কাবার পৌঁছার আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে, এমন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। কোরআনে হজ ফরজ করে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
Advertisement
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ
নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)
কারো ওপর যদি হজ ফরজ, তাহলে তার কর্তব্য দ্রুত হজ আদায় করে নেওয়া। অযথা দেরি করা ঠিক নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
Advertisement
مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُযে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৮৮৩)
কারো ওপর যদি হজ ফরজ হয় এবং হজ পালন করার শারীরিক সক্ষমতাও থাকে, তার জন্য নিজে হজ করা জরুরি। বদলি হজ করালে অর্থাৎ অন্যকে দিয়ে হজ করালে তার ফরজ হজ আদায় হবে না। যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে এবং হজ আদায়ের সক্ষমতাও ছিল, কিন্তু শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করেনি, তারপর হজ্ব আদায়ের সক্ষমতা হারিয়ে মাজুর হয়ে পড়েছে, এমন ব্যক্তির ওপর নিজের পক্ষ থেকে বদলি হজ করানো অথবা মৃত্যুর সময় বদলি হজ করানোর অসিয়ত করে যাওয়া ফরজ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাসআম গোত্রের এক নারী নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর বান্দার উপর ফরযকৃ্ত হাজ আমার বয়োবৃদ্ধ পিতার উপর ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের ওপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ (আপনি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারেন)। ঘটনাটি বিদায় হজের সময় ঘটেছিল। (সহিহ বুখারি: ১৪২৫)
এমন কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো উচিত, যিনি নিজের ফরজ হজ আদায় করেছে। নিজে হজ করেনি এবং হজে যাওয়ার সামর্থ্য নেই অর্থাৎ হজ ফরজ নয় এমন ব্যক্তিকে দিয়েও বদলি হজ করানো জায়েজ।
যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ কিন্তু সে নিজের ফরজ হজ আদায় করেনি, তাকে বদলি হজ করার জন্য পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, আমি শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ পালনের উদ্দেশে উপস্থিত হয়েছি। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শুবরুমা কে? সে বললো, আমার ভাই অথবা বললো, আমার নিকটাত্মীয়। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আপনি নিজের হজ পালন করেছেন? সে বললো, না। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে প্রথমে নিজের হজ পালন করুন। পরে শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ করবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৮১১)
Advertisement
তবে এ রকম কাউকে দিয়ে বদলি হজ করালেও হজ আদায় হয়ে যাবে, পুনরায় বদলি হজ করাতে হবে না।
ওএফএফ/এএসএম