একুশে বইমেলা

বরিশালে প্রথমবার বই বিনিময় উৎসব

জীবনানন্দের শহর বরিশালে প্রথমবারের মতো বই বিনিময় উৎসবের (বরিশাল পর্ব-১) আয়োজন করে ‘বই বন্ধু’ নামের একটি সংগঠন। নগরীর বান্দ রোডের শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ১০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় এ উৎসব শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও কথাসাহিত্যিক মনদীপ ঘরাই।

Advertisement

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত, কুরআন তেলাওয়াত এবং গীতা পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তনিমা রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোরশেদ আলম হৃদয়, লেখক মানজুলুল হক, রেজওয়ান শুভ, রুদ্র শামীম, বিপ্রতীপ শাহ তন্ময়।

উৎসবে যোগ দিতে না পারলেও দূর থেকে বই বন্ধুর উপদেষ্টা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ভলান্টিয়ার ও আয়োজকদের সাহস ও সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

উৎসবে কবিতা, উপন্যাস, গল্পসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় দুই সহস্রাধিক বই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বইগুলোর পরিবর্তে পাঠকরা তাদের ঘরে পড়ে থাকা বা সাজিয়ে রাখা বইটি বদলে অপঠিত বই নিয়েছেন, এটাই হচ্ছে বই বিনিময়। শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এমন বইয়ের খোঁজও করেছেন অনেকে। হাজারো বইয়ের ভিড়ে পছন্দের বইটি খুঁজে পেতে একজন বইপ্রেমীর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয়েছিল মহা মিলনমেলায়।

Advertisement

সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিবা রহমান বলেন, ‘বই পোকা নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বই বিনিময় উৎসবে। তাই ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি অনুষ্ঠান দেখতে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, ‘পড়া বই ঘরে না রেখে নতুন কিছু জানার আশায় বই বিনিময় করতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ এতে নতুন বই পড়তে টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে না।’

আরও পড়ুনজীবনানন্দের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘জলের প্রতিভা’নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের শতবর্ষ: বিশদ আলোকপাত

ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী আজাদ রহমান বলেন, ‘আমার কাছে গল্প ও উপন্যাসের চারটি বই আছে। এগুলোর বিনিময় করে ক্লাসে পাঠের সহায়ক হয় এমন বই নিতে চাই।’

Advertisement

উৎসবের স্বেচ্ছাসেবক শাহাদাৎ হোসেন সৌরভ বলেন, ‘২০১৮ সালে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। বরিশালে আমাদের বই বিনিময় উৎসব প্রথম। এর আগে ঢাকায় দুবার ও চট্টগ্রামে তিনবার উৎসব করেছি। আমাদের ইচ্ছা, পাঠককে বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন বইয়ের স্বাদ পাইয়ে দেওয়া।’

বই বন্ধুর ভলান্টিয়ার ইব্রাহীম নিরব বলেন, ‘বাড়িতে অনেক বই পড়ে থাকে। সেই বই যদি অন্য কেউ পড়ে উপকৃত হন, তাহলে বিষয়টি দারুণ খবর ও আনন্দময়। বই পড়লে মানুষের চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি, উগ্রতা, মারামারি কমে আসে। কারণ একজন পাঠক সব সময় নিজেকে নম্র-ভদ্র রেখে চলাফেরা করেন।’

সংগঠনের টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন তাহসিন বলেন, ‘মানুষের সময়ের মূল্যায়ন করতে বাস ও সেলুন পাঠাগারের পাশাপাশি আমরা প্রতি বছর বই বিনিময় উৎসব করছি। যাতে মানুষ বই পড়তে আরও উৎসাহী হয়।’

উৎসবের প্রধান অতিথি মনদীপ ঘরাই বলেন, ‘শুধু বই মানুষের মনে দীর্ঘদিন ছাপ রেখে যেতে পারে। একটা রিল মানুষের মনে সাময়িক স্থায়ী হয়। দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে কেবল বই। এজন্য এমন উৎসব বরিশালে নয়, অন্যত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তরুণ সমাজ বই পড়ায় আগ্রহ দেখায়।’

উৎসব শেষ হয় বরিশাল টিমের সদস্যদের ক্রিয়েটিভ কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সারাদিন বই আলোচনা, কবিতার আসর, গুণিজনদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

এসইউ/জেআইএম