চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গত চারদিন ধরে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে গাছপালা ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। খুঁটিও ভেঙে গেছে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীনে থাকা প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও ৫-৬ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, পোলট্রি ও গরুর খামার, বাসাবাড়ির বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (৬ মে) দুপুরে হঠাৎ শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড় প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। এতে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১৭৫টি। ১৫৪০ স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে। ক্রসআর্ম ভেঙেছে ১৫৯টি।
মিরসরাই সদর, বারইয়ারহাট পৌরসভাসহ মহাসড়কের পাশের বড় কয়েকটি বাজারে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও ৫-৬ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লোকবল সংকট রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে ছিঁড়ে যাওয়া তার লাগানো, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে সময় লাগছে বেশি।
Advertisement
আরও পড়ুন
মিরসরাইয়ে কদর বেড়েছে মোমবাতির, বেশি দামে বিক্রির অভিযোগকালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
বাসিন্দারা বলছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে থাকা মাছ, মাংসসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রহী বরফ গলে নষ্ট হয়ে গেছে। মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করতে না পারায় ভোগান্তিতে বেড়েছে চরমে।
বিদ্যুৎ না থাকায় পোলট্রি ও গরুর খামারে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাম্য হাট-বাজারের দোকান ও বিপণিবিতানগুলো সন্ধ্যার আগে বন্ধ করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো উপজেলায় কদর বেড়েছে মোমবাতির। পাঁচ টাকার মোমবাতি ১০ টাকা আর ১০ টাকার মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। সংকট দেখিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম।
উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নে পূর্ব মলিয়াশ এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংসসহ সব ধরনের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
কলেজছাত্র প্রণয় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে থাকা গাছপালা আমাদের এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে কেটে দিয়েছে। তারপরও গত চারদিন ধরে আমরা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছি।’ খইয়াছড়া ইউনিয়নের দুয়ারু এলাকার বাসিন্দা মো. আরশেদ বলেন, সোমবার দুপুরে ধমকা হাওয়ায় আমার এলাকায় দুটি বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। যা মেরামত করা অল্প কিছু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আজ চারদিন হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উপজেলার সোনাপাহাড় মস্তাননগর এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাশেল চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় কয়েকটি খুঁটির তার ছিঁড়ে গেছে। পুরো উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সামনে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তারগুলো। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখা মেলেনি সেখানে। দুর্গাপুর ইউনিয়নের পালগ্রামের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘চারদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানের দুটি ফ্রিজের সব আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার আগে দোকান বন্ধ করে ফেলতে হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে আমার অফিসের আওতাধীন ৭৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ৩৫০টি স্পটে তার ছিঁড়েছে। ২০টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। আমাদের এখনো ২৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর ও হাটহাজারী অফিস থেকেও অতিরিক্ত লোক আনা হয়েছে কাজ করার জন্য। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের জিডিএম হেদায়েত উল্লাহ বলেন, অফিসের আটজন লেবারসহ লাইনম্যানরা লাইন মেরামতের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন। এখনো ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। সব লাইন মেরামত করতে আরও ৫-৬ দিন লেগে যেতে পারে।
সীতাকুণ্ড জোনাল অফিসের ডিজিএম পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আমাদের ৩০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। তবে দু-একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এসআর/এমএস