জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার উপস্থিতিতে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে

আদালতের আদেশ অমান্য করে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা শরীফকে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন জাপানি মা ডা. এরিকো নাকানো। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জেসমিন মালিকার বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ। ওই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, ওইদিন আদালতে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার উপস্থিতিতে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে আজ জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুলে হোসেন কেসি। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। অন্যদিকে ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম।

ইমরান শরীফের করা আদালত অবমাননার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন। তবে, আইনজীবী জানান এর মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন জেসমিন মালিকা।

আদালতে ওইদিন ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন সন্তান জন্ম নেয়। এরপর বনিবনা না হওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশে এসে রিট করেন এরিকো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে বলেন।

২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরীফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। ১২ জুলাই জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সে রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।

আদেশে আদালত বলেন, জেসমিন মালিকা শরীফের হেফাজত মায়ের পক্ষে নির্ধারণ করা হবে, তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেয়ে লায়লা লিনা শরীফের হেফাজত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে।

রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ করার পর দুপক্ষই (বাবা ও মা) পৃথক দুটি আপিল আবেদন করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে তার কাছে ফেরাতে চেয়ে এবং নাকানো এরিকো মেজো মেয়েকে তার কাছে নিতে চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।

এর মধ্যে ইমরানের আবেদনে একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ছিল। যেখানে বলা হয়েছে, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়। ওই আবেদনের ওপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য গত ১৫ এপ্রিল ঠিক করে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় মেয়েকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে চলে গেছেন।

ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বড় সন্তানকে নিয়ে এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে।

তবে আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, গত ৯ এপ্রিল দুপুর ১টায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশ হওয়ার আগেই বেলা ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের কোথাও বলা নেই যে, বাবা ও মা সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারবেন না।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস