রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জামিউল ইসলাম নাদিমকে মারধরের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। তাছাড়া নির্যাতিত শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ঠিক মতো চালানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। আদেশ পাওয়ার পর আগামী ৩০ দিনের মধ্যে উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষকে এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) এক পত্রিকায় ‘উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র মারধরের ঘটনা’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। পরে বুধবার প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার আবু খালেদ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ আর এম হাসানুজ্জামান।ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক, কলেজটির অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে স্বপ্রণোদিত এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল অষ্টম শ্রেণির কাকাতুয়া শাখার শিক্ষার্থীরা স্কুলের চতুর্থ তলায় জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষকের কাছে অংক ক্লাস করছিল। এ সময় জাওশেদ আলম নামে অন্য এক শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে ডেকে এনে বেদম মারধর করেন। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘স্কুলের গভর্নিং বডির একজন সদস্য আমাকে বলেছেন, তিনি চাইলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। একটি “সামান্য” ইস্যু নিয়ে আমরা নাকি রাজনীতি করছি।’ তিনি জানান, তার ছেলের গায়ের ব্যথা কমলেও মানসিকভাবে এখনো সে আতঙ্কের মধ্যে আছে। তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পরিবার।অষ্টম শ্রেণির কাকাতুয়া শাখার একজন ছাত্রী ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। …ওই ছাত্রী বলে, ‘জাওশেদ স্যার ওকে জানালার কাছে দাঁড় করিয়ে বেদম মারপিট করেন। মনে হচ্ছিল উনি চাইছিলেন আমরাও যেন দেখি। কেউ কেউ ভয়ে কেঁদে ফেলে। আমাদের ক্লাস টিচার ওকে একটা দরখাস্ত লিখতে সাহায্য করে। এরপর আমরাও একটা দরখাস্ত লিখে সিগনেচার নিই। আমরা যারা কাজটা করছিলাম, কাল (রোববার) প্রিন্সিপাল আমাদের ডেকে ভয় দেখিয়েছে। আমরাও খুব ভয়ে আছি।’এদিকে উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ উম্মে সালেমা বেগম বলেন, ‘অঙ্কের শিক্ষক অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে পিটিয়েছেন। তিনি অন্যায় করেছেন। তবে কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এত জনপ্রিয় শিক্ষক হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন সেটাও দেখতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, কিছু হলেই শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়।অভিভাবকেরা বলেন, তারা বারবার চেষ্টা করেও অধ্যক্ষের দেখা পাননি। যখনই তারা দেখা করতে চান, তখনই অধ্যক্ষ বলেন তিনি মিটিংয়ে আছেন বা ব্যস্ত আছেন। একজন ক্ষুব্ধ অভিভাবক বলেন, ‘আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। এই স্কুলে সবচেয়ে সুলভে যা পাওয়া যায় তা হলো হুমকি আর টিসি। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েরা কোনো কিছুই বলতে পারি না। বললেই টিসি দেয়ার ভয় দেখানো হয়। অভিভাবকরা জানান, একটি ‘বিশেষ ধরনের কমিটি’ এখন স্কুলটি পরিচালনা করছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ উম্মে সালেমা বেগম বলেন, ‘ওই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেসব নাম ধরে শিক্ষককে ব্যঙ্গ করে সেগুলো ভদ্রসমাজে উচ্চারণযোগ্য নয়। ওই শিক্ষক খুবই জনপ্রিয়। তার কাছে অনেকেই প্রাইভেট পড়তে চায়।’ তদন্ত চলার সময় তিনি ক্লাস নেয়ায় শিক্ষার্থীরা ভয় পাচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি ক্লাস না নিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তার আশঙ্কা।এফএইচ/এসকেডি/এমএস
Advertisement