বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু। চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির রিচার্জ কার্ড হাতে এসেছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গণশুনানিতে। অনলাইনে নিবন্ধন করেও মিলছিল না প্রশ্ন করার সুযোগ। অনেক চেষ্টার পর হাতে মাইক্রোফোন পান তিনি। তীব্র ক্ষোভ করে প্রকাশ করে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর ‘ছলচাতুরি’ করার অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
Advertisement
আমিনুল ইসলাম বুলু বলেন, ‘আজ আমি চারটি রিচার্জ কার্ড হাতে এখানে এসেছি। এখানে বাংলালিংকে আছে ১৯ টাকায় দুদিন মেয়াদ, রবিতে ১৯ টাকায় ২৪ ঘণ্টা মেয়াদ। গ্রামীণফোনেও একই রকমভাবে তিনদিন মেয়াদ। আমার প্রশ্ন হলো- এটা কি পচে যাওয়া জিনিস? এগুলোর মেয়াদ থাকবে কেন? অনেক গরিব মানুষ ২০ টাকা রিচার্জ করেন। হয়তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি কথা বলে মিনিট শেষ করতে পারেন না। তাই বলে তার টাকা কেটে নেওয়া হবে, ব্যালান্স শূন্য করে ফেলা হবে?’
গণশুনানিতে উপস্থিত বিটিআরসির কোনো কর্মকর্তা অবশ্য তার এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা জানান, এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। মোবাইল অপারেটদের সঙ্গে আলোচনা করে মেয়াদ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবেন।
বুধবার (৮ মে) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিটিআরসির সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত গণশুনানিতে এমন নানান অভিযোগ তুলে ধরেন গ্রাহক ও অংশীজনরা। গ্রাহকদের একটি বড় অংশই মোবাইল অপারেটদের নানান অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শিগগির এগুলোর সমাধান চান। তবে সেখানে কোনো মোবাইল অপারেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কথা বলতে দেখা যায়নি।
Advertisement
একটি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সম্প্রতি চীনে যান। সেখানে রোমিং সেবা পেতে চেষ্টা করেন তিনি। তার টাকা কেটে নিলেও রোমিং সেবা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার এ সমস্যা নিয়ে কথা বলেন খোদ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমরা মোবাইল অপারেটদের তাগিদ দেবো। আশা করি, এমন সমস্যা আর হবে না।’
আরও পড়ুন
ইন্টারনেট সেবায় প্রভাবশালী কেউ প্রভাব খাটাতে পারবে নাবাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ গ্রামীণফোনের ব্যালান্স ফ্লাশ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘মেয়াদ শেষে ব্যালান্স থাকলেও তা থেকে চার্জ কেটে শূন্য করে দিচ্ছে গ্রামীণফোন। কোন আইনে তারা এটা করছে? এর জন্য তো গ্রামীণফোনের তিন কোটি টাকা জরিমানা হওয়া উচিত।’
তার প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির কমিশনার ও মহাপরিচালকরা বলেন, ‘এটা নিয়ে তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাননি।’ পরে মহিউদ্দিন আহমেদ কয়েকজন গ্রাহকের নামসহ সমস্যা তুলে ধরেন এবং তারা বিটিআরসিতে যোগাযোগ করেও সাড়া পাননি বলে জানান।
Advertisement
গণশুনানিতে সরাসরি উপস্থিত হওয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুম অ্যাপে যুক্ত হয়ে প্রশ্ন করা অধিকাংশ গ্রাহকই মোবাইল অপারেটদের রিচার্জ, ডাটা প্যাকেজ ও মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া রোমিং সেবা চালু হলেও তা কাজ না করা, ইন্টারনেটের গতি কম থাকা, মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ডাটার মেয়াদ শেষ দিকে গেলে গতি কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন তারা।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, এবার গণশুনানিতে নিবন্ধিত প্রশ্নকারী ছিলেন তিন হাজার ২৫ জন। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক প্রশ্নকারী প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক, দেশের ভোক্তা সংঘ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও শুনানিতে অংশ নেন।
এএএইচ/ইএ/এএসএম