খেলাধুলা

শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য ২ গোল, বায়ার্নকে বিদায় করে ফাইনালে রিয়াল

প্রথম লেগে ২-২ গোলে ড্র। ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের আশা প্রায় শেষ। দর্শকরাও হতাশ হয়ে পড়লেন। এবার আর সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠা হলো না। অল জার্মান ফাইনালই হতে যাচ্ছে তাহলে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখ!

Advertisement

কিন্তু ফুটবলে কত কিছুই না ঘটে! শেষ মুহূর্তেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। সে আশাতেই হয়তো ছিলেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। তাকে হতাশ করেনি রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ দুই মিনিটের ব্যবধানে অবিশ্বাস্য দুই গোল করে বসলো তারা। জোড়া গোল করলেন সুপার সাব হোসেলু। ৮১তম মিনিটে ফেডে ভালভের্দের পরিবর্তে মাঠে নামলেন। ৮৯তম মিনিটে করলেন প্রথম গোল এবং দুই মিনিট পর ৯০+১ মিনিটে করলেন দ্বিতীয় গোল।

হোসেলুর জোড়া গোলেই ঘুরে গেলো ভাগ্যের চাকা। যেখানে এতক্ষণ বায়ার্ন মিউনিখকেই ফাইনালিস্ট ধরে নিয়েছিল সবাই, সেখানে তাদের বিদায় করেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে গেলো রিয়াল মাদ্রিদ। দুই লেগ মিলে রিয়ালের পক্ষে ফল ৪-৩ গোলের ব্যবধান।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুর্দান্ত রিয়াল মাদ্রিদের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে আক্রমণ প্রতি আক্রমণে বায়ার্নের রক্ষণকে তটস্থ করে রেখেছিলেন রিয়ালের ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, বেলিংহ্যামরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মিলছিল না। বায়ার্নের পোস্টে অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যানুয়েল ন্যুয়ার। রিয়ালের আক্রমণগুলো সব ঠেকিয়ে দিতে থাকেন। ফলে প্রথমার্ধে কেউ কোনো গোলের দেখা পায়নি।

Advertisement

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি গিয়ে রিয়ালের আক্রমণ সামলে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বায়ার্নই প্রথমে গোল দিয়ে বসে। ৬৮তম মিনিটে আলফন্সো ডেভিস গোল করে এগিয়ে দেন বায়ার্নকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দুই মিনিটের ব্যবধানে বায়ার্নের স্বপ্ন চূর্ণ করে ফাইনালে পৌঁছে গেলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা রিয়াল মাদ্রিদ।

বায়ার্নের মাঠ থেকে ২-২ গোলের সমতা নিয়ে ফেরা রিয়াল এগিয়ে যেতে পারতো শুরুতেই; কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের প্রচেষ্টা ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ফিরতি বল জালে পাঠানোর সুযোগ ছিল রদ্রিগোর; কিন্তু তার শট দারুণ দক্ষতায় আটকে দেন ম্যানুয়েল ন্যুয়ার।

এরপর বায়ার্নের রক্ষণে আরও চাপ বাড়ায় রিয়াল। বায়ার্নও সুযোগ বুঝে প্রতি আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ২৮ মিনিটে হ্যারি কেইনকে হতাশ করেন রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। ইংলিশ ফরোয়ার্ডের ভলি ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান তিনি।

দশ মিনিট পরই আরেকবার রিয়ালকে হতাশ করেন ন্যুয়ার। ভিনিসিয়ুসের শট বক্সে থাকা রিয়ালের কোনো ফুটবলার পা ছোঁয়াতে না পারলেও বল অন্য পাশের পোস্টে লেগে জালে জড়াতে যাচ্ছিল; কিন্তু ঝাঁপিয়ে বাইরে সেটা বাইরে ঠেলে দেন ‍ন্যুয়ার।

Advertisement

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে দুই দলই গোলের খোঁজে নামে। আরেকবার হ্যারি কেইনের প্রচেষ্টা আটকে যায় লুনিনের গ্লাভসে। একটু পরই সুযোগ হারায় রিয়াল। ভিনিসিয়ুসের বাড়ানো বলে রদ্রিগো পা ছোঁয়ালেও তা পোস্টে যায়নি। বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধের মতো এই অর্ধেও বিধ্বংসী রূপে দেখা মেলে ন্যুয়ারকে। রদ্রিগোর ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফেরানোর পর ভিনিসিয়ুসের শট ফিস্ট করে পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে ঠেলে দেন বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষক।

৬৮ মিনিটে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে ম্যাচে এগিয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। সার্জ জিনাব্রির বদলি হয়ে নামা আলফন্সো ডেভিস গোল করে বসেন। নিজেদের অর্ধ থেকে হ্যারি কেইনের লম্বা করে বাড়ানো পাস বাম দিকে পেয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের মাপা শটে জাল খুঁজে নেন এই উইঙ্গার।

চার মিনিট পর বায়ার্নের জালে বল পাঠায় রিয়াল; কিন্তু তা বাতিল করে দেন রেফারি। বায়ার্নের বক্সে জসুয়া কিমিচকে হাত দিয়ে মুখে আঘাত করে ফেলে দেন নাচো। ভিএআর দেখে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। হারতে বসা রিয়াল ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চেষ্টা চালায়। ম্যাচে ফেরার সেই গোলও পেয়ে যায় পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ন্যুয়ারের মারাত্মক ভুলে। ৮৯ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট ন্যুয়ার গ্লাভসে নিতে না পারলে দৌড়ে এসে আলগা বল জালে পাঠান বদলি নামা হোসেলু।

যোগ করা সময়ে আবারও হোসেলু ম্যাজিক। রুডিগারের ক্রস পেয়ে ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকে জালে পাঠান এই স্প্যানিশ তারকা। শুরুতে সহকারী রেফারি অফসাইডের পতাকা তুললেও ভিএআর পরীক্ষায় দেখা যায় অনসাইডেই ছিলেন না হোসেলু। রেফারি গোলের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন রিয়ালের ফুটবলার ও সমর্থকরা। তাতে আরও একবার প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ১৮তম বারের মতো ইউরোপ সেরার ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছে যায় লজ ব্লাংকোজরা।

জুনের ১ তারিখ লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ফাইনালে আরেক জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ।

আইএইচএস/এএসএম