আইন-আদালত

ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ারের নামে ভুয়া পেজ, হ্যাকের পর আদালতে ধরা যুবক

জনপ্রিয়, আলোচিত ও বিশেষ ব্যক্তিদের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হরহামেশা ভুয়া আইডি খুলতে দেখা যায়। অথচ যাদের নামে ভুয়া আইডি খোলা হয় অনেকক্ষেত্রে তারা নিজেরাই তা জানেন না। ফেসবুকে এমনই একটি ভুয়া আইডি খোলেন নরসিংদীর আইয়ুব আলী খান। যেখানে তিনি র‍্যাবের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নাম ব্যবহার করেন। তবে নামের মূল বানান কিছুটা পরিবর্তন করে আইডিটির নাম দেন ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’। সেই আইডি হ্যাক হওয়ার খবর নিয়ে আদালতে মামলা করতে গিয়ে নিজেই ধরা পড়লেন যুবক।

Advertisement

আইয়ুব আলী খান নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রামের মৃত ওসমান গনির ছেলে। ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’ নামে একটি প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ খুলে ২০২০ সাল থেকে চালাতেন তিনি। পেজটি হ্যাক হওয়ায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াতের আদালতে বুধবার (৮ মে) সাত লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে যান আইয়ুব আলী। তবে ভুয়া আইডি খোলার প্রতারণার বিষয়টি আদালতের নজরে আসে।

আদালতের কাছে মামলার জবানবন্দি দেওয়ার সময় আইয়ুব আলী জানান, ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নামে চালানো ফেসবুক পেজটি থেকে তিনি আয়ও করতেন। পেজটি হ্যাক হওয়ায় সাত লাখ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে যান তিনি। ‘সেলিব্রেটিং জিন রডেনবেরি: স্টার টেক'স ব্রিজ অ্যান্ড নাসা’ নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পেজটি হ্যাক করেছে বলেও অভিযোগ তার।

আরও পড়ুন

Advertisement

ফেসবুক ভর্তি ভুয়া তারকা! হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধারের নামে প্রতারণা করে কোটিপতি দুই ভাই

এসময় অন্যের (ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের) নামে আইডি খুলে ফেসবুক পেজ চালানোর মতো জালিয়াতির ঘটনায় আইয়ুব আলী খানকে কাঠগড়ায় আটকে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এর দুই ঘণ্টা পর ক্ষমা চেয়ে আদালত থেকে ছাড়া পান তিনি। তবে তার মামলাটি গ্রহণ করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় সেটি খারিজ করে দেন আদালত।

 

আমার পেজের আমি অ্যাডমিন। আমার নামে ভিন্ন কোনো পেজ খুলে চালানো হচ্ছে আমি তা জানি না। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।- র‍্যাবের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম

 

আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় বিচারক বাদী আইয়ুব আলী খানকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কেন মামলা করতে এসেছেন। তখন বাদী বলেন, আমি ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’ নামে ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন। আমার পেজটি হ্যাক হয়েছে। তাই আমি মামলা করতে এসেছি।

এরপর বিচারক বাদীকে প্রশ্ন করেন, আপনি (বাদী) কি ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম? জবাবে বাদী বলেন, না। তখন বিচারক প্রশ্ন করেন, আপনি তো ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম না। তাহলে কেন আপনি তার নামে পেজ খুললেন। এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি বাদী। তখন আদালত বলেন, এখন তো আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্য ব্যক্তির নামে ফেসবুক পেজ খুলে আপনিই তো অপরাধ করেছেন।

Advertisement

সাইবার ট্রাইব্যুনালের পেশকার মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আইয়ুব আলী খান নামে এক ব্যক্তি সাইবার আদালতে মামলা করতে এসেছিলেন। পরে জবানবন্দিতে জানা যায়, তিনি নিজেই অন্যের নামে আইডি খুলে জালিয়াতি করেছেন। তখন বিচারক পুলিশকে নির্দেশ দেন বাদীকে আদালতের কাঠগড়ায় আটকে রাখতে। দুই ঘণ্টা পর ক্ষমা চাওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে ছাড়া হয়।

আরও পড়ুন

আইনমন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলায় থানায় জিডি বিচারপতির নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ মে ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’ নামে একটি প্রফেশনাল ফেসবুক আইডি খোলেন আইয়ুব আলী খান। পেজটির বিভিন্ন পোস্ট সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছায় সদস্য হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। এ কারণে আসামি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছিলেন।

 

আমি ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের পেজের অ্যাডমিন। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম আমাকে এ পেজের অ্যাডমিন করেছিলেন। আমি এ পেজে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতাম। পেজটি হ্যাক হওয়ায় সাইবার আদালতে মামলা করতে এসে নিজেই বিপদে পড়ে গেলাম। আমাকে বিচারক দুই ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন।- বাদী আইয়ুব আলী খান

 

অভিযোগে আইয়ুব আলী খান আরও দাবি করেন, ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে পরদিন ২০ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাদীর বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদে ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম পাবলিক পেজ গ্রুপে’র বিভিন্ন পোস্ট দেখার সময় আসামি ‘সেলিব্রেটিং জিন রডেনবেরি: স্টার টেক'স ব্রিজ অ্যান্ড নাসা’ নামের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পেজটিতে স্বেচ্ছায় যুক্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে বাদীর তৈরি ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম নামের পাবলিক পেজটি’র নাম বদলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’ নাম করে ফেলা হয়।

ফলে পেজটি সম্পূর্ণ আসামির (সেলিব্রেটিং জিন রডেনবেরি: স্টার টেক'স ব্রিজ অ্যান্ড নাসা) নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পেজে যে কোনো পোস্ট করলে আসামির পেজে চলে যায়, যার সদস্য সংখ্যা ২২০০ থেকে ৪৩০০। তখনই বাদী বুঝতে পারেন, তার পেজটি আসামির পরিচালিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। এরপর আইডি উদ্ধার ও নিজের পরিচালনায় অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বাদী।

 

আপনি তো ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম না। তাহলে কেন আপনি তার নামে পেজ খুললেন। এখন তো আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্য ব্যক্তির নামে ফেসবুক পেজ খুলে আপনিই তো অপরাধ করেছেন।-সাইবার ট্রাইব্যুনাল

 

মামলার আবেদনে বলা হয়, বাদী আইয়ুব আলী ‘ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম’ নামে একটি প্রফেশনাল ফেসবুক পেজে দুই হাজারের বেশি সদস্য যুক্ত করে সংবাদ ও তথ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বক্তব্য পোস্ট করে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে দীর্ঘদিন পরিচালনা করে আসছিলেন। অন্যদিকে আসামি ষড়যন্ত্রকারী, পরবিত্তলোভী, অর্থ আত্মসাৎকারী, আইন অমান্যকারী ও হ্যাকার প্রকৃতির ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। পেজটি হ্যাক হওয়ায় প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও দাবি বাদীর।

আরও পড়ুন

ভুয়া আইডি নিয়ে বিড়ম্বনায় চিত্রনায়িকা রেসি বিচারপতি মানিকের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আইয়ুব আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের পেজের অ্যাডমিন। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম আমাকে এ পেজের অ্যাডমিন করেছিলেন। আমি এ পেজে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতাম। এর মধ্যে আমেরিকার নাসা কোম্পানি আমার পেজটি হ্যাক করে নেয়। আমি প্রতিকার চেয়ে ঢাকার সাইবার আদালতে মামলা করতে আসি। মামলা করতে এসে আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেলাম। আমাকে বিচারক দুই ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন। পরে আমাকে ছাড়া হলে আমি কোর্ট থেকে চলে আসি।’  

র‍্যাবের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে কর্মরত। পেজটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার পেজের আমি অ্যাডমিন। আমার নামে ভিন্ন কোনো পেজ খুলে চালানো হচ্ছে আমি তা জানি না। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

জেএ/এমকেআর/জিকেএস