উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে ইউরোপের প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘সেগুলো আমরা মূল্যায়ন করছি। যেটা সবচেয়ে ভালো হবে সেটা আমরা কনসিডার (বিবেচনা) করবো।’
Advertisement
মঙ্গলবার (৭ মে) সচিবালয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যানি ম্যারি ট্রেভেলেইনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবে। কারণ বাজেটের আগে তারা দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে মনে করি।
বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ইউরোপে এয়ারক্রাফট বানায় এয়ারবাস। বাংলাদেশে আমাদের বোয়িং আছে। আমরা এয়ারবাসও কনসিডার করছি। যাতে একই প্লেন না কিনে দুই ধরনের প্লেন হলে আমাদের বিভিন্ন সুবিধা হতে পারে। সেটা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ বিমানের অধীনে একটা মূল্যায়ন কমিটি করা হয়েছে। আমাদের কাছে এয়ারবাস তাদের ফিন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন অফার দিয়েছে। আমরা সে অফারগুলো স্টাডি করে সিদ্ধান্ত নেবো।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে যে, একটি সমঝোতা সাইন করার জন্য। আমরা বলেছি এখন সমঝোতা সাইন করতে পারবো না। কারণ মূল্যায়ন শেষ হয়নি। এটা শেষ হলে সাইন হবে।’
উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব কী- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এয়ারবাস কিনতে ইউকে, জার্মানি ও ফ্রান্স মিলে প্রস্তাব দিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ভালো অফার পেয়েছি। ইতোমধ্যে বোয়িংও ভালো অফার দিয়েছে। সেগুলো আমরা মূল্যায়ন করছি। যেটা সবচেয়ে ভালো হবে সেটা আমরা কনসিডার করবো। এক্ষেত্রে দাম, ব্যাংকঋণ ও টেকনিক্যাল অফারগুলো বিবেচনা করা হবে।
বিমানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে খুবই সুসম্পর্ক আছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করি বিভিন্ন সেক্টরে, শুধু এভিয়েশনে না। ব্রিটিশ বাংলাদেশি যারা সেখানে আছেন তারা খুবই ভালো কাজ করছেন। বাংলাদেশে তারা বিভিন্নভাবে আমাদের সহযোগিতা করছেন। যে আলোচনা হয়েছে, প্রাথমিক ফোকাস হচ্ছে এভিয়েশন শিল্প নিয়ে কী করতে পারে। কারণ তারা দেখেছেন নতুন এয়ারপোর্ট। তারা বুঝতে পেরেছেন এই এয়ারপোর্ট অনেক কাজ হবে।
‘এছাড়াও সিকিউরিটি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা ইন্টারেস্টেড। তারা জানে যে ঢাকা ছাড়াও আরও দুটি এয়ারপোর্ট- সিলেট এবং কক্সবাজারে হচ্ছে। এ ব্যাপারগুলোতেও তারা আগ্রহী। তারা আরও জানতে পেরেছেন যে সৈয়দপুর ঘিরে আমরা নতুন হাব বানানোর চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্প সম্পর্কে তাদের অনেক আগ্রহ। বাংলাদেশের এভিয়েশনে আগামী দিনে অনেক কর্মকাণ্ড আছে। তারা আগ্রহী যাতে কাজ করতে পারে। আমরাও আগ্রহী কারণ অতীতে তাদের সাথে কাজ করেছি।’
Advertisement
আরও পড়ুন
শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল ৬ মাসের মধ্যে পুরোপুরি চালু: মন্ত্রী ড্রিমলাইনারের কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেইতারা কি বিনিয়োগ করতে চায়- জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, তারা আমাদের পর্যটন খাতে বিনিয়োগের কথা বলেছে। এভিয়েশন খাতে কীভাবে বিনিয়োগ করবে আগামীতে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রধানত কথাবার্তা হয়েছে নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণের এবং প্রশিক্ষণের সঙ্গে হয়তো বিনিয়োগও হতে পারে। সেগুলো আমরা আগামীতে দেখবো।
বোয়িং-৭৮৭ উড়োজাহাজের ত্রুটির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ফেডারেশন এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এগুলো সাময়িক গ্রাউন্ডেড করতে বলা হলে বিমানের সামনে বিকল্প কী থাকবে- জানতে চাইলে বিমানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের কথা এসেছে। বোয়িং বলার চেষ্টা করছে- যে বলেছে সে পাগল। এই মুহূর্তে আমরা ওত সিরিয়াসলি নিচ্ছি না।
‘আমরা বিমানকে নির্দেশনা দিয়েছি যে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো ভালোভাবে জানো। আমাদেরও টেকনিক্যাল জ্ঞান হয়েছে নিজস্ব। আমরা দেখছি কোনো সমস্যা আছে কি না। এই মুহূর্তে আমরা কোনো সমস্যা পাইনি। ড্রিমলাইনার শুধু বাংলাদেশকে দেয়নি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রায় ৫০০ এর মতো ড্রিমলাইনার চলে। এটা সবার সঙ্গে আলোচনা করে চিন্তা নেবো কী করা যায়। একটা প্লেন হঠাৎ করে একজন বা দুইজনের কথার ওপর ভিত্তি করে আমরা ফাইনাল সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। তবে এ ব্যাপারে কনশাস। আমরা এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা করছি।’
চার বিমান কোম্পানির কাছে বেবিচকের প্রায় এক হাজার ২২৩ কেটি টাকা পাওনা, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ থাকবে কি না- প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিমান লাভ করছে। তারা হজসহ অন্যান্য ফ্লাইট পরিচালনা করছে। একেকটা এয়ারলাইনসের কাছে পাওনা-দেনা এগুলো পার্ট অব বিজনেস। আমার মনে হয় বিমান তাদের টাকা রিয়ালাইজ করার চেষ্টা করবে। সিভিল এভিয়েশনেরও কারও কারও কাছে টাকা পাওনা আছে। বিজনেসে টাকা পাওনা পার্ট অব বিজনেস। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব টাকা রিয়ালাইজ করতে পারি।’
আরএমএম/বিএ/এমএস