প্রবাস

স্পেন প্রবাসীদের হৃদয়ে স্থান করে নিলেন জুমা আক্তার

স্পেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির সূচনা হয় প্রায় ৩৪ বছর আগে। ১৯৮৯ সালে রাজধানী মাদ্রিদে তখন হাতেগোনা কজন বাংলাদেশি অভিবাসী বসবাস করতেন। ধীরে ধীরে কমিউনিটি বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস। ইউরোপের অন্যতম পর্যটননির্ভর মাদ্রিদে বসবাস করছেন প্রায় ৩৫ হাজার বাঙালি।

Advertisement

তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। প্রবাসীদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়াশোনা করে। বাবারা অধিকাংশ কল-কারখানা, রেস্তোরাঁ বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চাকরিরত। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন। মায়েদের বড় অংশ ঘর-গৃহস্থলির কাজ করেন। কেউ কেউ চাকরিও করেন।

অভিবাসী বাংলাদেশিদের প্রথম জেনারেশন বা ছেলে-মেয়েদের একটা বড় অংশ এখন পূর্ণ যৌবনে পা দিয়েছে। কেউ কেউ কর্মজীবন শুরু করেছে। অনেকেই পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে সংসারও পেতেছে। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের একটা বড় অংশ লেখাপড়া শেষ করেনি বা করতে পারেনি। বেশিরভাগই প্রাথমিক এবং ‘ও’ লেভেল থেকেই তারা ঝরে পড়েছেন। সংসারের হাল ধরেছেন। পরিবার তথা বাবা-মাকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য কর্মজীবনে নেমে পড়েছেন। তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া শেষ করেছেন, তাদের একজন জুমা আক্তার কালাম। স্পেনে প্রথম বাংলাদেশি চিকিৎসক।

রোববার মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী মনক্লোয়া হাসপাতালে যোগদান করে চিকিৎসা পেশা শুরু করেছেন। যেখানে অধিকাংশ অভিবাসী প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই কর্মজীবন শুরু করে ঝরে পড়ছেন ছেলেমেয়েরা। সেখানে জুমা আক্তার মেধা তালিকায় উক্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসা পেশা শুরু করায় বাবা-মা, ভাই, আত্মীয় স্বজন ও অভিবাসীদের মধ্যে বইছে এখন খুশির ঝিলিক। ইউরোপে বাংলাদেশিদের বসবাসের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশটিতে প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক হওয়ায় প্রবাসীরা ও আনন্দে উচ্ছ্বসিত। জুমা এখন প্রবাসীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

Advertisement

জুমা আক্তার ১৯৯৯ মাদ্রিদের ১৬ জানুয়ারি মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল কালাম সেলিম। তিনি মাদ্রিদে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার আদিনিবাস বাংলাদেশের কুমিল্লায়। তিনি (জুমা আক্তার) স্থানীয় স্কুলে পড়া লেখা শেষ করে মেডিসিন বিষয় নিয়ে ভর্তি হন উনিভারসিদাদ অটোনোমো মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রযুক্তির এই যুগে মূলত মেডিসিন ও চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ থেকেই স্বপ্ন দেখেন চিকিৎসক হওয়ার। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত যেই হাসপাতালে ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই হাসপাতালে চিকিৎসক হওয়ার মাধ্যমে।

বাবা-মা, বড় বোন আর ছোট এক বোনকে নিয়ে মাদ্রিদে বসবাস করেন জুমা আক্তার। তার বড় বোন সুমা নাহিদা আক্তার স্থাপত্য ও নগরায়ন নিয়ে উনিভার্সিটি অফ আর্কিটেচার আলকালা দে হেনারেসে অধ্যনরত। ছোট বোন জান্নাত আক্তার লন্ডন কিং লো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

জুমা আক্তার বলেন, ছেলে-মেয়েদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে বাবা-মার উৎসাহ থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিক গুজব কিংবা অপ্রপচারকে কর্ণপাত না করে অর্থিক ও মানসিকভাবে ছেলে-মেয়েকে সহযোগিতা করতে হবে। আর ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও চেষ্টা, সাধনা থাকা প্রয়োজন।

Advertisement

তিনি বলেন, অভিবাসী বাবা-মায়েদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য হলেও আমাদের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। লেখাপড়া করে তাদের ও কমিউনিটির মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।

এই সাফল্যে কমিউনিটির মধ্য়ে যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছেন তাতে তিনি আপ্লুত উল্লেখ করে বলেন, আমি ফুল টাইম চিকিসা সেবার পাশাপাশি আরও বেশি লেখাপড়ার মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন করে চিকিৎসা বিষয়ে একজন প্রফেসার হতে চান বলেন তিনি।

জুমা বলেন, আমি জন্মসূত্রে স্প্যানিশ হলে বাবা-মার সাহায্যে বাংলা ভাষার (কঠিন শব্দ ব্যতীত) কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে গভীর আগ্রহ। আমি বাংলা এবং স্প্যানিশ উভয় সংস্কৃতির মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চাই। তাদের সেবা করে যেতে চাই।

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতার চিত্রকর্ম ও সাহিত্য, রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু, সমুদ্র সৈকত এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর জন্য পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষ এই দেশে বাংলাদেশিদের বসবাসের দিক থেকে স্পেনের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে পড়ালেখা শেষ করে ডাক্তার চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন জুমা আক্তারই প্রথম।

জুমার এই সাফল্যে তার পিতা আবুল কালাম সেলিম বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন আসোসিয়েশন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহীসহ কমিউনিটির তার কর্মস্থল মনক্লোয়া হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তার সফলতা কামনা করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তারা স্পেনে বেড়ে উঠা এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ও অভিভাবকরা আরও উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছেন অনেক প্রবাসী।

এমআরএম/এএসএম