‘আমলারা গোষ্ঠী স্বার্থকে সামাজিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে ঠাঁই দিতে চাইছেন। যদিও আমলাদের গোষ্ঠী স্বার্থ আমাদের সমাজে শক্তিশালী করেছে বহু আগে থেকেই।’
Advertisement
বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ। আমলাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে জাগো নিউজের কাছে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।
এমএম আকাশ বলেন, ‘আশির দশকে বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলন হয়। তখন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টস একটি স্লোগান দেয়। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে আমিও ছিলাম। স্লোগানটি ছিল ‘শিক্ষা হচ্ছে অধিকার, এটি কারও সুবিধা নয়’।
ভর্তি পরীক্ষায় আমলার সন্তানও পরীক্ষা দেবে কৃষকের সন্তানও পরীক্ষা দেবে। যে টিকবে সেই অধিকারটুকু পাবে। এটিই ঠিক পদ্ধতি। তবে আরও সঠিক হতো আমরা যদি শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম।
Advertisement
স্লোগানের মর্মার্থ হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষ তার জন্মের পর সুশিক্ষার অধিকার লাভ করে। মানুষ মাত্রই এ অধিকার আছে। সভ্য সমাজ দুনিয়াব্যাপী এ স্লোগান মেনে নিয়েছে।
তার মানে আমলাদের সন্তানদেরও অধিকার আছে, আবার আমলা নয় তাদের সন্তানদেরও শিক্ষা লাভের অধিকার আছে। এই মৌলিক অধিকার প্রশ্নেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এই মৌলিক অধিকার সব নাগরিকের জন্য সমান। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। অন্তত কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটির ক্ষেত্রে কোনো তফাৎ চলতে পারে না।’
আরও পুড়ন
‘আমলাদের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি হাস্যকর’ ‘আমলার সন্তানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্টটা নিতে পারছি না’‘কিন্তু আমাদের এখানে যেহেতু নানা শ্রেণিতে বিভাজিত সেহেতু যাদের অর্থ আছে, সম্পদ আছে তাদের এই মৌলিক অধিকারগুলো থাকে। যাদের অর্থ নেই তাদের এ অধিকারগুলো থাকে না। অর্থের তারতম্যের ভিত্তিতে অধিকারেরও তারতম্য হয়। অথচ এ বৈষম্য আমাদের সংবিধান সংরক্ষণ করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
Advertisement
‘সুতরাং ক্যাডেট কলেজের মতো বাজারভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করলেও অন্যের জন্য কিন্তু দরজা বন্ধ করে দেইনি। আমাদের এখানে ডিমান্ড বেশি সাপ্লাই কম। এজন্য আমরা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি এবং এটি নিশ্চিত করিনি যে শুধু আমলাদের সন্তানরাই এখানে ভর্তি হতে পারবে। ভর্তি পরীক্ষায় আমলার সন্তানও পরীক্ষা দেবে কৃষকের সন্তানও পরীক্ষা দেবে। যে টিকবে সেই অধিকারটুকু পাবে। এটিই ঠিক পদ্ধতি। তবে আরও সঠিক হতো আমরা যদি শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম।’
আমলাদের সন্তানদের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার প্রস্তাব আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। আমলারা তো সুশিক্ষিত। তারা বাংলাদেশের সংবিধান পড়ার কথা, বোঝার কথা। আমলারা গোষ্ঠী স্বার্থ সামাজিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে ঠাঁই দিতে চাইছেন।
বিভাজিত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এমন প্রস্তাব আসলে কীসের ইঙ্গিত বহন করে?
‘আমলারা এমন প্রস্তাব তুলতে পারে নিজেরা আরও সুবিধা নেওয়ার জন্য। সাধারণত কোটা সুবিধা দেওয়া হয় দুর্বলদের জন্য। আমলারা তো দুর্বল বা বঞ্চিত ব্যক্তি নন, তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা কেন? তারা তো এমনিতেই সবল।
আমলাদের সন্তানদের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার প্রস্তাব আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। আমলারা তো সুশিক্ষিত। তারা বাংলাদেশের সংবিধান পড়ার কথা, বোঝার কথা। মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষার অধিকার, ছাত্র আন্দোলন তো তাদের অজানা থাকার কথা নয়। আমলারা গোষ্ঠী স্বার্থ সামাজিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে ঠাঁই দিতে চাইছে। যদিও আমলাদের গোষ্ঠী স্বার্থ আমাদের সমাজে শক্তিশালী করেছে বহু আগে থেকেই।
‘আমলাদের গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে। টিকে থাকার জন্যই সরকার বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীকে সব সময় সুবিধা দেয়। সরকার আমলাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করে দিতেই পারে, তাতে অবাক হবো না। তবে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।’
এএসএস/এমএস