দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে গেছেন অন্য বন্দরে। এতে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে। রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল এসব পণ্য আমদানি থেকে।
Advertisement
জানা যায়, ভারত থেকে পচনশীল পণ্যের একটা বড় অংশ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য আমদানি হতো দুপুরের পরপরই। সন্ধ্যার আগেই এসব পণ্য চালান শুল্কায়ন ও খালাস হয়ে চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু গত মাস খানেক ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র ৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানি নিয়ম চালু করেছে। ফলে অধিকাংশ পচনশীল পণ্য চালান দিনের দিন প্রবেশ করতে না পেরে ওপারেই নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো চালান সিরিয়াল পেয়ে রাতে প্রবেশের অনুমতি পেলেও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেওয়ায় পরের দিন বন্দর থেকে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পণ্য পচতে শুরু করে।
পচনশীল পণ্য আমদানিকারকদের দাবি, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জেনারেল গুডস আমদানির অনুমতি দেওয়া হোক। শুধুমাত্র পচনশীল পণ্য চালান আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর থেকে মাত্র ২-৩ ঘণ্টার জন্য একসঙ্গে সব পচনশীল পণ্য চালান আমদানির অনুমতি দিলে পচনশীল পণ্য চালান খুব দ্রুত সময়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
গত মাস খানেক আগেও এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি হতো। যা থেকে সরকার প্রতিদিন ১৮-২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছিল। কিন্তু বর্তমানে আমদানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ট্রাকে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তিকরণ বিধিমালা-২০২১ নামে একটি নতুন বিধিমালা জারি করে। যার আওতায় ৬৩ ধরনের পচনশীল পণ্যের শুল্কায়নসহ সব কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
চলতি বছরের ৩০ মার্চ ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার অনিল কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করে যেখানে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজারকে বলা হয়েছে, পচনশীল পণ্য দ্রুত রপ্তানির বিষয়টিতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ আর্টিকেল নম্বর ৭.৯ ডাব্লুউটিও ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এ আদেশ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। কিন্তু ওই আদেশ মানছে না ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পচনশীল পণ্য দ্রুত আমদানিতে সিরিয়ালের নামে দীর্ঘসূত্রিতা প্রথা বাতিল করে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের দাবি করেছেন আমদানিকারকসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোলের আমদানিকারক রাহাত ট্রেডার্সের মালিক জিয়াউর রহমান জানান, পেট্রাপোল স্থলবন্দরের নতুন ম্যানেজার যোগদান করার পর হয়রানি বেড়ে গেছে। সারাদিন বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি করলেও সন্ধ্যার পর কাঁচামাল ও পচনশীল পণ্যের ট্রাক পাঠানোর কারণে আমরা মালামাল দিনে দিনে ডেলিভারি নিতে পারছি না। কারণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যার পর এসব মালের শুল্কায়ন ও খালাস করে না। পরের দিন এসব মাল খালাস নিতে গেলে দেখা যায় শতকরা ১০ ভাগ মাল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি। বাধ্য হয়ে এসব মালামাল অন্যান্য বন্দরে চলে যাচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, পচনশীল পণ্য সবার আগে প্রবেশ ও খালাসের নির্দেশনা রয়েছে। বিগত দিনে এটাই চালু ছিল। পেট্রাপোল বন্দরে নতুন ম্যানেজার যোগদান করার পর থেকে তিনি সিরিয়াল ও আন্তর্জাতিক রুল ভঙ্গ করে পচনশীল পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্য এক করে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি করাচ্ছেন এবং সেটা সন্ধ্যার পর। এতে আমদানিকারকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হবে বলে অ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ ব্যাপারে অবিলম্বে দুই দেশের কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বসে বিষয়টি সুরাহার আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য এরইমধ্যে পেট্রাপোল বন্দর ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পচনশীল পণ্যের ট্রাক সারাদিনব্যাপী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে, সে অনুযায়ী সিরিয়াল মেইনটেইন করার জন্য তাকে আমি অনুরোধ করেছি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত ট্রাকের সিরিয়ালের নামে এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দরে আগের তুলনায় আমদানি কমে গেছে। আমদানিকারকরা তাদের সুবিধার্থে অন্য বন্দরের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের রাজস্বও কমছে।
এফএ/এএসএম