চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষি আরিফুল ইসলাম (৫০)। গত ২৫ বছর ধরে তিনি আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সিজনে গাছে আম ধরিয়ে অগ্রিম বাগান বিক্রি করেন অন্য ক্রেতাদের কাছে।
Advertisement
কিন্তু এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও বাগান বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। কারণ বাগানে আসেনি আশানুরূপ আমের গুটি। এতে হতাশায় দিন কাটছে তার। শুধু আরিফুল ইসলাম নয় জেলার অধিকাংশ আম চাষির অবস্থা এমন।
আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজে বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আম ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর গাছে আম ধরিয়ে এসময়ে বাগান বিক্রি করি। কিন্তু এবার গাছে নেই পর্যাপ্ত আমের গুটি। তাই ক্রেতাও নেই।
আর এবার বেড়েছে কীটনাশক-বালাইনাশক খরচ। আম যদি না হয় এসব কৃষি পণ্যের টাকা আমি দিব কোথায় থেকে। এমনকি যে শ্রমিক আমরা আগে পেতাম ২০০ টাকায় টাকায়। এখন শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা। এতে গত বছরগুলোর ছেলে এবার উৎপাদন খরচ বাড়বে দ্বিগুণ।
Advertisement
তিনি বলেন, বছরে দুইবার প্রথা হিসেবে আম গাছ বিক্রি হয়। একবার এসময়ে আম গাছে ধরিয়ে। আর আরেকবার আম নামিয়ে নিয়ে আগামী বছরের জন্য অগ্রিম বাগান বিক্রি করা যায়। কিন্তু এখন আর কোনটিই হচ্ছে না।
পুকুরিয়া এলাকার আম চাষি সুজা মিয়া বলেন, আমার খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাতবিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। প্রতিবছর আম ফলিয়ে গাছেই বিক্রি করি। কিন্তু এবার বাগানে নেই পর্যাপ্ত আমের গুটি। এতে দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও পাচ্ছি না ক্রেতা।
কানসাট আব্বাস বাজার এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, জন্মসূত্রে ১৫ বিঘা আম বাগান পেয়েছেন। একটি মাত্র সন্তান বিদেশে থাকে। এজন্য শ্রমিকদের দিয়ে গাছে আম ধরিয়ে এসময় অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এবার ক্রেতা পাচ্ছেন না তিনি। এতে অযত্নে পড়ে আছে তার ১৫ বিঘা আম বাগান।
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আম বাগান মালিক রাকিমুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবাদে আমরা পরিবার নিয়ে এক যুগ ধরে রাজশাহীতে বসবাস করি। জন্মসূত্রে পাওয়া এলাকায় ১০ বিঘার বেশি জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ আম গাছগুলোতে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচর্যা কতে আম ধরিয়ে এসময় বিক্রি করি। আমাদের বাড়িতে ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবার কোনো ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। শুনছি বাগানে নাকি আম নেই।
Advertisement
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাগানে কম মুকুল এসেছিল। আর ফুটন্ত মুকুলের সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় এবার ৭০ শতাংশ গাছেই আম নেই। এজন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে আম চাষিদের যদি প্রণোদনার আওতায় আনা যায় তাহলে কিছুটা হলেও বেঁচে যাবে আম চাষিরা। অন্যথায় আম ব্যবসায়ীয় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, এবার যে বিরূপ আবহাওয়া চলছে, এতে আমের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এমনকি সামনে আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে। যেমন কাল বৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি এসব হতে পারে। এমনটা হলে আমের উৎপাদন আরও কমে যাবে। সব মিলিয়ে বলা যায় আমরা যে আম উৎপাদনের আশা করেছিলাম তা এবার নাও হতে পারে।
তাই চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে আগের পুরনো জাতগুলো পরিবর্তন করে নতুন জাতে রূপান্তরিত করার। কারণ আমরা কয়েক বছর থেকেই দেখছি আগের বড় গাছগুলোতে আম না হলেও নাবি জাতের ছোট গাছগুলোতে আম আসছে।
সোহান মাহমুদ/আরএইচ/জিকেএস