সাহিত্য

হাসি বিষয়ক তিনটি কবিতা

হাসিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Advertisement

সুদূর প্রবাসে আজি কেন রে কী জানিকেবল পড়িছে মনে তার হাসিখানি।কখন নামিয়া গেল সন্ধ্যার তপন,কখন থামিয়া গেল সাগরের বাণী।কোথায় ধরার ধারে বিরহবিজনএকটি মাধবীলতা আপন ছায়াতেদুটি অধরের রাঙা কিশলয়—পাতেহাসিটি রেখেছে ঢেকে কুঁড়ির মতন।সারা রাত নয়নের সলিল সিঞ্চিয়ারেখেছে কাহার তরে যতনে সঞ্চিয়াসে হাসিটি কে আসিয়া করিবে চয়ন,লুব্ধ এই জগতের সবারে বঞ্চিয়া।তখন দুখানি হাসি মরিয়া বাঁচিয়াতুলিবে অমর করি একটি চুম্বন।

****

হাসিরোকনুজ্জামান খান

Advertisement

হাসতে নাকি জানে না কেউকে বলেছে ভাই?এই শোন না কত হাসিরখবর বলে যাই।

খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতেচাঁদ হাসে তার সাথে সাথেকাজল বিলে শাপলা হাসেহাসে সবুজ ঘাস।খলসে মাছের হাসি দেখেহাসেন পাতিহাঁস।

টিয়ে হাসে রাঙ্গা ঠোঁটে,ফিঙের মুখেও হাসি ফোটেদোয়েল-কোয়েল-ময়না-শ্যামাহাসতে সবাই চায়।বোয়াল মাছের দেখলে হাসিপিলে চমকে যায়।

এত হাসি দেখেও যারাগোমড়া মুখে চায়,তাদের দেখে প্যাঁচার মুখেওকেবল হাসি পায়।

Advertisement

****

হাসিশামসুর রাহমান

যার ইন্তেকালহলো আজ, তিনি খুব একাকী এখন।একটি কাফনতার আর পৃথিবীর মাঝখানে গূঢ় অন্তরালদিয়েছে নিপুণ বুনে। কাঠের চেয়ারে বসে তিনিপড়তেন খবরের কাগজ, কোরান,কখনো নিতেন ঘ্রাণফুলের, কখনো শুনতেন রিনিঝিনিকাচের চুড়ির আর দিতেন চুমুকদুধের গেলাশে ঘুমোবার আগে; কী-যে সুখপেতেন বালিশে মাথা রেখে,স্বপ্নের ছায়ায় যেত দু’চোখের পাতা ঢেকে।

এখন এ-ঘরে কেউ নেই, শুধু,আস্তেসুস্থে যাচ্ছে পুড়ে বিবাগী লোবান।এত কিছু আছে ঘরে-আসবাব, বই তবু এ-ঘর বিরানমাঠ, আদিগন্ত ধুধু!কলতলা ভরে আছে শূন্য মাটির কলসে, পথেযাচ্ছে ঠেলাগাড়ি খুব কাতরাতে কাতরাতে,কেশর নাড়ছে ঘোড়া, নীল মাছি এসে বনে ভিখিরীর ক্ষতে,আয়াতের ধ্বনি লগ্ন ধোঁয়া-ধোঁয়া সুগন্ধের সাথে।

দেয়ালে মৃতের ফটোগ্রাফ,পড়েছে ধুলোর কিছু ছাপ,ছবির দু’চোখ দ্যাখে চেয়ে কৌতূহলেনিজেকে কাফন মোড়া, টেবিলে রয়েছে পড়ে বসিবেলফুল কিছু, শিয়রে স্মৃতির মতো জ্বলেনিভৃত আগরবাতি, ফটোর সস্মিত ঠোঁটে কেমন রহস্যময় হাসি।

এসইউ/জেআইএম