দেশজুড়ে

‘তনু হত্যা পরিকল্পিত, মিশনে অংশ নেয় একাধিক ব্যক্তি’

আজ ২০ এপ্রিল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলো। কিন্তু কারা এবং কেন তাকে হত্যা করেছিল সেই কারণ এখনো খুঁজে পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। তবে তনু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি একাধিক ব্যক্তি অংশ নেয় বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) ড. নাজমুল করিম খান।মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের নিকট এমনই তথ্য জানান, ড. নাজমুল। তিনি বলেন, ‘তনু হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তনুর লাশ পাওয়া গেছে সেনানিবাসের ভেতর, তাই আমরা এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি, তারা সব ধরনের সহায়তা করছেন, সিআইডি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত করছে এবং আশা করি একটি সুফল আমরা পাবোই।’জানা যায়, মামলা তদারকি করতে তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল  মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ফিরে বিকেলে সিআইডি কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এ সময় প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও কুমেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক শারমীন সুলতানাকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ১০ এপ্রিল ডা. শারমিনকে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।এর আগে সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দুপুর সোয়া ১টায় তনুর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের গেস্ট হাউজে সেনানিবাসের লে. কর্নেল ও মেজর পদমর্যাদার ৪ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সিআইডি ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ, এএসপি এহসান উদ্দিন চৌধুরী, পরিদর্শক মনজুর এ মাওলাসহ তদন্ত সহায়ক দল এবং কুমিল্লাস্থ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব চন্দ্র রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল তনুর মরদেহ। দেশব্যাপি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ঘাতকদের বিচার ও গ্রেফতারের দাবিতে। হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলেও এখনো হত্যার রহস্য বের হয়নি। এরই মধ্যে মামলার তদারকি করতে সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এ দলটি গত ২, ৩ ও ৭ এপ্রিল সেনানিবাস এলাকায় তনুর মরদেহ উদ্ধারের স্থানসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এসময় সিআইডি ৩ দফায় তনুর মা-বাবা, সহপাঠি, ডাক্তার নার্স, কিছু সেনা সদস্য, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল সিআইডির ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মো. মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ ও স্টেশন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।এদিকে দফায় দফায় সিআইডির কর্মকর্তাদের কুমিল্লায় আগমন, বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং এতো সব দৌড়ঝাঁপ করার মাঝেও হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১ মাসেও রহস্য বের করা কিংবা ঘাতকদের চিহ্নিত করতে পারেনি সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশ, পিবিআই, ডিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার দ্বিতীয় তদন্ত সংস্থা ডিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর মরদেহ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল করা হয়।গত ৪ এপ্রিল তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা (কেপি সাহা)। ওই রিপোর্টে তনুর মৃত্যুর কারণ এবং ধর্ষণের আলামত ছিল না। তদন্ত সংস্থা সিআইডি এখন অপেক্ষায় রয়েছে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্টের। শিগগিরই এ রিপোর্ট আসতে পারে বলে কুমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।‘এ জগতে বিচার না পেলে পরকালে তো পাবো’দীর্ঘ প্রায় এক মাসেও মামলার তদন্তে কোনো সুখবর না পেয়ে হতাশ তনুর পরিবার। মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘দুপুরে সিআইডির কর্মকর্তারা আমার বাসায় এসে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন, এমন আশ্বাস তারা আগেও দিয়েছেন, মামলার অন্য কোনো বিষয়ে তারা কিছু জানতে চাননি, আমি কর্মকর্তাদের নিকট শুধু ন্যায় বিচার চেয়েছি।’ইয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘মানুষ মিথ্যা কথা বলে যে কাউকে বাঁচাতে পারে, কিন্তু আল্লাহ সব দেখেছেন, তিনি তো ন্যায় বিচার করবেন, এ জগতে আমি আমার মেয়ের ন্যায় বিচার না পেলেও পরকালে তো এ বিচার পাবো, এছাড়া আমার কিছুই বলার নেই।’মো. কামাল উদ্দিন/বিএ

Advertisement