ক্যাম্পাস

রাবিতে চলছে অপরিপক্ব আম-লিচু পাড়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ফলের বাগান রয়েছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু সংখ্যক আম-লিচুর বাগান ইজারা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ঈসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার আশপাশের সবগুলো আম ও লিচুগাছ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এসব অপরিপক্ব আম-লিচু পাড়া নিয়ে চলছে এক রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এতে প্রশ্ন উঠেছে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর নৈতিক দায়িত্ব নিয়েও।

Advertisement

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিপক্ক হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা বস্তা ভরে অপরিপক্ব লিচু ও আম পেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে রীতিমতো অপরিপক্ব ছোট আম পাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সবার মধ্যে আগেভাগে ফল পাড়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ফলে আমগুলো পাকাতো দূরের কথা নরম আঁটিসহ আম পেড়ে ব্যাগ ভারি করতে ব্যস্ত হয়েছেন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ জাতের আম এখনো ঠিকমতো পরিপক্কই হয়নি। এমনকি বীজে ঠিকমতো আঁশই তৈরি হয়নি। আর লিচুতে আঁটি ছাড়া আর কিছুই নেই, তাও আবার অনেক টক। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের পেছনের গাছগুলোর নিচে শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা গেলো। কারো হাতে ইটের বড় খোয়া, আবার কারো হাতে গাছের ভাঙা ডাল। এগুলো দিয়ে গাছগুলোতে ঢিল মেরে ফল পাড়ার চেষ্টা করছেন তারা। এতে করে গাছে থাকা অনেক ফলই আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রয়ে যাচ্ছে যা পরবর্তীকালে পচে নষ্ট হবে। এছাড়া ঢিল ছোড়ায় আশেপাশে চলাচলরত শিক্ষার্থীদেরও সমস্যা হচ্ছে। ঢিল এসে শরীরে লাগার ভয়ের মধ্য দিয়ে গাছতলা পার হতে হচ্ছে তাদের।

মাহির আলম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের আমগাছগুলো থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী দলবেঁধে আম পাড়ছেন। কতিপয় শিক্ষার্থী না বুঝেই ফজলি, নাক ফজলি, ল্যাঙড়া প্রভৃতি আম পেড়ে রুমে নিয়ে যাচ্ছেন পাকিয়ে খাবেন বলে। কিন্তু তারা এতটাই অজ্ঞ যে জানেনই না এই আমগুলো এখনো পাড়ার সময় হয়নি। আর একজনে ১০০ জনের হক মেরে খাওয়ার প্রথাতো আছেই। ঠিকমতো খেতে পারুক আর না পারুক অনেকে অর্ধেকই নষ্ট করে ফেলেন।

Advertisement

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পী বলেন, এই অপরিপক্ব আম-লিচু পেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিচু মনমানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। আর কয়েকদিন পরতো এগুলো আমরাই খাবো। এই অপরিপক্ব আম-লিচু খেয়ে তারা কী স্বাদ পাচ্ছে বিষয়টি আমার বোধগম্য না। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসহাবুল হক বলেন, এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এবার প্রশাসন সৈয়দ ঈসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত আম, লিচু ও কাঁঠাল গাছগুলো ইজারা দেয়নি। তবে আমি শুনতে পেরেছি কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অপরিপক্ব অবস্থায় আম বস্তা ভরে পাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি একটা ফোন পেয়ে গতকাল সন্ধ্যার আগে রাকসু ভবনের সামনে গিয়ে দেখলাম ৮-১০ জন শিক্ষার্থী প্রায় ৪-৫ কেজি বাচ্চা লিচু পেড়েছে। আমি অপরিপক্ব লিচু না বলে বাচ্চা লিচুই বললাম। অনেকটা ঘৃণা ভরে জিজ্ঞাসা করলাম, কী করবে এগুলো দিয়ে? তারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমরা যদি আর ১৫ দিনের জন্য আম-লিচু পাড়া থেকে বিরত থাকতে পারি তাহলে এগুলো পরিপক্ক হয়ে যাবে।

এফএ/জেআইএম

Advertisement