ফরিদপুরের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে ভুট্টা চাষ। চরবাসীসহ চাষিদের ভুট্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় চরের জমিতে হতাে না তেমন ফসল। শত শত একর জমি পড়ে থাকতাে অনাবাদি। এসব জমিজুড়ে জন্ম নিতাে আগাছা। এখন সেসব জমিতে চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা। এই ভুট্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের হাতছানি দিচ্ছে চরের মানুষদের।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্টিত ডিক্রীরচর, নর্থচ্যানেল ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে ভুট্টা। চরগুলাে আগের মতাে বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকে না। এখন বছরের ৩ থেকে ৪ মাস পানি থাকে। তাই বছরের ৭ থেকে ৮ মাস পানি না থাকায় এবং কােথাও কােথাও বিশেষ করে উঁচু এলাকায় বছরের ৯ থেকে ১০ মাস পানি না থাকায় জমিভেদে এখন বছরে ২ থেক ৩ বার ভুট্টার চাষাবাদ হয়। এতে বাড়ছে ১২০ দিনের ভুট্টা চাষ।
সরেজমিনে জানা যায়, একসময় চরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকা ঘিরে ছিল গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগি পালন। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া আগাছার ওপর ভর করেই পশুপালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। তবে বেশ কয়েক বছর আগে পশুর খাবারের চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ ভুট্টা চাষ শুরু করেন। প্রায় এক যুগ আগেও তারা ভুট্টার গাছকে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করতেন। তবে প্রায় এক দশক আগে থেকে হলেও ভুট্টার চাষাবাদ বেড়েছে। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে এলাকার মানুষের জীবনচিত্র।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ফরিদপুরের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ভুট্টার চাষাবাদ। ২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কােটি টাকার মতো। এই আবাদের অধিকাংশই পদ্মা নদীর চরাঞ্চল এলাকার।খরিপ-২ মৌসুমের (চলমান) আবাদে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ২ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আবাদ এখনাে চলমান।
Advertisement
আরও পড়ুন
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বেড়েছে ভুট্টা চাষ ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষসদর উপজেলার ডিক্রীরচরের নুর ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টনের বেশি ভুট্টা উৎপাদিত হয়। ফলে ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছি। কয়েক বছর আগে প্রতি মণ ৫-৬শ টাকা বিক্রি হলেও এখন বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ভুট্টা ১২-১৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’
চরমাধবদিয়ার ভুট্টা চাষি খবির শেখ বলেন, ‘হেক্টর প্রতি চাষাবাদ খরচ ১০-১২ হাজার টাকা হলেও গড়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন হয়। এতে অন্য ফসলের তুলনায় যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।’
নর্থচ্যানেলের রুস্তম আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু ব্যবসায়ী চরে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করলেও সেই সংখ্যা একেবারে কম। তাই বাজারজাত করতে এখনাে দূরের শহরে নিয়ে যেতে হয়। এতে কৃষকদের নানা ঝক্কি পােহাতে হয়। তাই চর এলাকায় ভুট্টার বাজার সৃষ্টি করা গেলে কৃষকদের মধ্যে চাষের আগ্রহ বাড়তো।’
Advertisement
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাে. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভুট্টার কােনাে অংশই ফেলনা নয়। গােড়ার অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। উপরের অংশ গােখাদ্য আর ফল মানুষের খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে চরাঞ্চল ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টার চাষাবাদ বেড়েছে।’
এন কে বি নয়ন/এসইউ/এমএস