টানা খরায় পুড়ছে নীলফামারী। অতিরিক্তি তাপমাত্রায় বিবর্ণ হচ্ছে ক্ষেত-খামারের ফসল। চলমান দাবদাহে জমিতে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা ও বিভিন্ন রোগ-বালাই। বাড়তি সেচ দিয়েও ফসল রক্ষায় বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। এতে জমির ধান, বাদাম, মরিচ, ভুট্টা, কলাসহ সবজিতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন চাষিরা।
Advertisement
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখানে নীলফামারীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৪০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ খরায় হুমকির মুখে পড়তে পারে ফসল উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল উৎপাদন এখন বড় চ্যালেঞ্জ কৃষকদের।
নীলফামারী জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম, ২৮ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১৭২ হেক্টর জমিতে কলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে।
Advertisement
সদরের চওড়া এলাকার কৃষক মাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধানেরতো এখন ফুল ফুটতেছে। যে পরিস্থিতি আকাশের, সকাল বেলা রোদের চাপ আবার বিকেলে কম। এভাবে রোদের তাপে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। আর আকাশের যা অবস্থা ঝড় বৃষ্টি হলেও কী যে হবে পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না।’
ডোমার চিকনমাটি এলাকার বাদামচাষি আনোয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, তীব্র দাবদাহে মলিন হয়ে যাচ্ছে তার ক্ষেতের বাদাম গাছ। যে মাটিতে সোনা ফলান, সে মাটিই যেন শুকিয়ে প্রাণহীণ। মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ফসল রোপণ করলেও খরায় চোখের সামনে নষ্ট হচ্ছে ফসল।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাটিতে রস নাই। বৃষ্টিও হচ্ছে না। সেজন্য বাদামের দানাও ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেশিনের পানি দিলে ৫ দিনও থাকে না সেই পানি। রোদে সব শুকিয়ে যায়।’
উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নবীজুল ইসলাম নবীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার কুয়াশা পড়ে বেশিরভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চড়া দামে চারা কিনে ধান লাগিয়েছি। এখন তীব্র দাবদাহে বের হওয়া ধান চিটায় পরিণত হবে মনে হচ্ছে। কী খেয়ে পরিবার নিয়ে বাঁচবো আল্লাহ জানে।’
Advertisement
ডিমলার খালিশাচাপানী এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। ভাবছিলাম ফলন ভালো হবে। কিন্তু খরার কারণে ভু্ট্টার ফলন একবারে কম। লাভ বেশি হবে না।’
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রচণ্ড তাপের কারণে কৃষকের ফসল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদেরকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ইব্রাহিম সুজন/এফএ/জেআইএম