দেশজুড়ে

‘ভোট নরমালে যদি না হয় সিজার করবো, এমপি সাহেব মাথার উপর আছেন’

‘এক লাখ টাকা জামানত এটা কি মুখের কথা। আগে ছিল ১০ হাজার টাকা জামানত এখন করছে এক লাখ টাকা জামানত। ভোটে কি আছে আমি দেখবো, নরমালে যদি না হয় সিজার করবো। এমপি সাহেব মাথার উপর আছে না।’

Advertisement

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের ভাতিজা ও ডিমলা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস পারভেজের এমন একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বুধবার (১ মে) রাতে ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী ডালিয়া গ্রামে এক নির্বাচনী সভায় এমন বক্তব্য দেন এমপির ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ। বক্তব্যটি দ্রুতই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। ওঠে সমালোচনার ঝড়। এমন হুমকি সংবলিত বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করছেন।

এ বিষয়ে ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ওটা এডিট করা। রহমান চেয়ারম্যানের ছেলে মুন চেয়ারম্যান এগুলা করছে। ওদের তো ভোট নাই। আমি সেখানে বলেছি, আমি সরকারি দলের লোক, আমি সাধারণ যা উন্নয়ন আছে নরমালি এটাতো আনবোই। পাশাপাশি ওপর থেকে উন্নয়ন সিজার করে আনার লাগে তাও আনবো। ভোটের বিষয়ে আলাপ হয়নি। নরমালের বাইরেও এমপি সাহেব আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছে সহজে তার কাছে যাইতে পারবো। আমি আলাদাভাবে উন্নয়ন আনতে পারবো। ওরা সুপার এডিট করে এই কাজ করছে।’

Advertisement

সেই নির্বাচনী সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন জানান, বক্তব্যটি ফেরদৌসেরই। তারা নির্বাচনী সভায় সরাসরি কথাগুলো শুনেছেন। এতে তারা বিস্মিতও হয়েছেন। একইসঙ্গে শঙ্কায় আছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে।

হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ভোটার জাগো নিউজকে বলেন, এ রকম বক্তব্যের মাধ্যমে ফেরদৌস সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। এসব বক্তৃতা শুনে ভোটারদের মনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।

অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার যেখানে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে এমপির ভাতিজার এমন বক্তব্য এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। এতে ভোটাররা ওই যুবলীগ নেতার হাত থেকে বাঁচতে তাকেই (ফেরদৌস) ভোট দিতে পারে।

এদিকে ফেরদৌস পারভেজের বিরুদ্ধে আবদুর রহমান নামে এক প্রার্থীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ওই প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

Advertisement

অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জনাব ফেরদৌস পারভেজ বিভিন্ন নির্বাচনী পথসভায় ঘোষণা দিচ্ছেন তিনি ডিমলা সদরের কোনো ভোট কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের কোন পোলিং এজেন্ট থাকতে দেবেন না। এই বলে তিনি প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি ডোমারের প্রিজাইডিং অফিসারকে ডিমলা ভোট কেন্দ্রে এবং ডিমলার প্রিজাইডিং অফিসারকে ডোমার ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। এছাড়াও নীলফামারী-১ আসনের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার এলাকায় এসে এবং ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে আপন ভাতিজা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস পারভেজের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।

এ বিষয়ে নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা) আসনের এমপি আফতাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এগুলো কতভাবে কত কথা লাগানো যায়। সে বলেছে উন্নয়ন সিজার করে নিয়ে আসবে। সেটাকে এডিট করে উল্টা দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ এরকম কত নোংরামী করবে তার ঠিক আছে? আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি, এর মধ্যে কয়েকজন বিদেশি নিয়ে এলাকায় গেছিলাম একটা উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে। আমি নাকি ভোট প্রার্থনা করেছি। আমি কোনো নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ করিনি, কোনো ভোটও চাইনি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে দরখাস্ত লিখে শেষ।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। আমরা বক্তব্যের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এছাড়াও এক প্রার্থী ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।

প্রথম ধাপে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ৮ মে। এবারের ভোটে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে দু’জনকে। তাদের একজন স্থানীয় সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার, অন্যজন ভাতিজা ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজ। দু’জনই এমপির প্রার্থী বলে ভোটারদের কাছে প্রচার করছেন।

এর আগে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্যরা প্রার্থী হতে মাঠে নামেন। এমনকি অনেক উপজেলায় তাদের স্বজনেরা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এতে দলের তৃণমূল নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের মাঠ থেকে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তবে দুজনের কেউই দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

ইব্রাহিম সুজন/এফএ/এমএস