দেশজুড়ে

পেটের দায়ে রিকশা চালান ৮০ বছরের কানাই মাতুব্বর

কানাই মাতুব্বর। বয়স ৮০ বছর। বয়সের ভারে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। তারপরও চালাতে হয় রিকশা। রিকশা চালিয়ে জোগাড় করতে হয় নিজের ও তার বৃদ্ধ স্ত্রীর খাবার।

Advertisement

প্রায় ৬০ বছর ধরে প্যাডেলচালিত রিকশা চালিয়েই সংসারের খরচ জোগাড় করছেন কানাই মাতুব্বর। ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। এ বৃদ্ধ বয়সে এসেও নিজের ভাঙাচোড়া রিকশা চালিয়েই আজও জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।

কথা বলে জানা যায়, কানাই মাতুব্বরের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার সৈয়দারবালী এলাকায়। যুবক বয়স থেকেই রিকশা চালাচ্ছেন। তার তিন ছেলে শাহাদাত মাতুব্বর, শামীম মাতুব্বর ও সাকিব মাতুব্বর দিনমজুরির কাজ করেন। ছেলেরা বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। একমাত্র মেয়ে পলিও অনেক আগে বিয়ে হয়ে স্বামীর সংসারে। এখন বৃদ্ধ স্ত্রী শাহনুর বিবিকে নিয়েই সংসার কানাই মাতুব্বরের। রিকশা চালিয়ে দিনে ১০০-২০০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই কোনোভাবে বেঁচে আছেন স্বামী-স্ত্রী দুজন।

আরও পড়ুন:

Advertisement

শরবত বিক্রির টাকায় চলে সংসার, ৫ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ ৭ দশক ধরে কামার পেশায় মজিবর রহমান

কানাই মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলেরা সবাই বিয়েশাদি করে আলাদা থাকে। তারাও দিনমজুরির কাজ করে। যা টাকা পায়, তা দিয়ে ওদের সংসারই চলে না, সেখানে আমাদের কীভাবে খাওয়াবে? তাই আমি রিকশা চালাই।’

তিনি বলেন, ‘এই গরমের মধ্যে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ি। কী করবো? পেটে তো খাবার দিতে হবে। তাই বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। টাকার অভাবে রিকশাটি মেরামতও করতে পারি না। রিকশাটির অবস্থা খারাপ। বর্ষার সময় পানি পরে।’

‘এমনিতেই প্যাডেলচালিত রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। সেখানে আমার বয়স দেখে ও রিকশা খারাপ দেখে অনেকেই ওঠে না। তবুও পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়’, আক্ষেপ করে বলেন বৃদ্ধ কানাই মাতুব্বর।

শহরের শকুনি এলাকায় কানাই মাতুব্বরের রিকশার যাত্রী ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘পা-চালিত রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপর ওনার আবার বয়স হয়েছে। আসলে তাকে দেখলে অনেক মায়া লাগে।’

Advertisement

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন প্রতিবেদককে বলেন, ‘যারা প্যাডেলচালিত রিকশা চালান তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে তাদের একটি তালিকা থাকলে, আমাকে দিয়েন। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ এলে সেখান থেকে তাদের দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/এএসএম