সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। গত বছর ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডে সড়ক বিভাজকে গাছ কাটার প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্বও দেন তিনি।
Advertisement
চলমান তাপপ্রবাহ, ঢাকায় গাছ কাটা, সবুজায়নে করণীয় বিষয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুসা আহমেদ।
গাছ কাটা বন্ধে আইন প্রণয়ন করা জরুরি জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে আলাদা করে আইন আছে। আমাদের দেশে সেই আইনটা করা এবং তার প্রয়োগটা জরুরি। স্বল্পসময়ে আইন না করা গেলেও অন্তত একটা সরকারি নির্দেশনা দিয়ে এটা থামাতে হবে। পরবর্তীসময়ে মাস তিনেকের মধ্যে একটা আইন করা ফেলা উচিত।
আমাদের নগর যেমন দরকার, দালানও দরকার। নগরে যেমন রাস্তা দরকার, নগরে তেমন সবুজ দরকার। সিটি করপোরেশনগুলো এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে প্রত্যেককে গাছ লাগাতে বা ছাদ বাগানের কথা বলতে পারে। যাতে গরম ও বায়ুদূষণ কমে।
Advertisement
‘দুটি আইনের খসড়া কেবিনেটে গিয়েছিল। একটা ২০১৬ সালে। যেটা মূলত ছিল গাছ কাটার বিরুদ্ধে। সেটা কেবিনেট ফেরত পাঠিয়েছে এই যুক্তিতে ‘বন আইনে গাছ কাটা প্রতিরোধ করা সম্ভব’। সেটা আসলে ঠিক কথা নয়। ঢাকা শহর তো আর বন না। বনেরটা বনায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
আরও পড়ুন
গাছ কেটে ছায়া খুঁজি তীব্র তাপপ্রবাহের সমাধান কোন পথে? তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় নেই কর্মপরিকল্পনা, ‘দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবিতিনি বলেন, ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের আইনও সংশোধন হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নীতিগতভাবে তা সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে ব্যক্তিপর্যায়ে গাছ কাটলেও সরকারের অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। সেটাও কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে পাস করা হয়নি সংসদে। এখন জরুরি হচ্ছে এখানে আইনি নিয়ন্ত্রণ আনা।
এখন সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ সবার উন্নয়ন দর্শন বদলানো উচিত জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের নগর যেমন দরকার, দালানও দরকার। নগরে যেমন রাস্তা দরকার, নগরে তেমন সবুজ দরকার। সিটি করপোরেশনগুলো এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে প্রত্যেককে গাছ লাগাতে বা ছাদ বাগানের কথা বলতে পারে। যাতে গরম ও বায়ুদূষণ কমে। ঢাকা শহরকে সবুজায়ন করতে হবে।
Advertisement
ঢাকার সব সড়কদ্বীপ সবুজায়ন করার আহ্বান জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, কোথাও কোনো সরকারি জায়গা ফাঁকা পেলে সরকারের কোনো না কোনো দপ্তর একটা আবদার করে, তারা ওখানে অফিস করতে চায়। এটা করা যাবে না। সড়কদ্বীপগুলোতে প্রচুর গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
কোথাও কোনো সরকারি জায়গা ফাঁকা পেলে সরকারের কোনো না কোনো দপ্তর একটা আবদার করে, তারা ওখানে অফিস করতে চায়। এটা করা যাবে না। সড়কদ্বীপগুলোতে প্রচুর গাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
তেজগাঁওয়ে পুরোনো বিমানবন্দর ফাঁকা পড়ে আছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরোনো বিমানবন্দরের মতো জায়গাগুলো সবুজায়ন করতে হবে। হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় যে পরিমাণ জায়গা আছে সেখানে রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী একটা ফরেস্ট বা সবুজায়ন করা যায়। ড্যাপে এটা বলা হয়েছে। সেটা করতে হবে।
পাশাপাশি ঢাকা শহরে আর দালানকোঠা বাড়ানো এবং লোকসমাগম যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহর যে পুরো আবৃত হয়ে গেছে, সেই কংক্রিটের কালচার থেকে সরে আসতে হবে। বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিবেশ নিয়ে বেলার কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকায় সরকারি পার্ক ও খেলার মাঠগুলোতে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা সরিয়ে দিতে দ্বিতীয়বারের মতো আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, মাঠে খেলাধুলা ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থাপনা সরিয়ে দিতে হবে। যেমন, পার্কে যদি কেউ ক্রিকেট পিস করে রাখে সেটা তো হবে না। কেননা পার্ক হচ্ছে জনসাধারণের জন্য। সেখানে খেলাধুলার জায়গা নয়। খেলার মাঠ হলে খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছু করা যাবে। পার্ক বা অন্য কোনো জায়গায় কোনো স্থাপনা থাকা যাবে না।
কোনো জায়গায় গাছ কাটা হলে এলাকাবাসী আবেদন করলে, পত্রিকায় দেখলে বা আমাদের চোখে পড়লে আমরা প্রতিবাদ করে চেষ্টা করি গাছ কাটা থামাতে। আর বাংলাদেশে পাহাড়ি বন রক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
এমএমএ/এএসএ/এমএস