ফরিদপুরের সরকারি আইনউদ্দীন কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তানভীর উজ-জামান। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ সিলেট। এখানে সন্ধ্যার পরে নামে কালবৈশাখী। একেবারে শিলাসহ বজ্রবৃষ্টি। রাত বাড়লে হয় বর্ষাকাল। ঘণ্টাদেড়েক তুমুল বর্ষণ। ভোরের দিকে শীতকাল। শীতকাল মানে একদম কুয়াশাও দেখা যায়। ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়। সমস্ত দিনের দাবদাহ শেষে বিকেলে আবার শরতের আকাশ পাওয়া যায়। একদম পরিষ্কার আকাশে তুলার মতো মেঘ উড়তে দেখা যায়। তারপর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যায়।’
Advertisement
তীব্র তাপপ্রবাহে সারাদেশের অবস্থা যেখানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, সেখানে ঠিক উল্টো চিত্র প্রকৃতিকন্যা সিলেটে। যেটি নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন শিক্ষক তানভীর উজ জামান। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।
দেশে চলমান তীব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহে যেখানে স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলার জায়গা নেই, সেখানে সিলেটের এমন অপরূপ প্রকৃতির খবর ছড়িয়ে পড়েছে সবদিকে। তাইতো প্রকৃতিকন্যা সিলেটের সাদাপাথরের স্বচ্ছ জলে গা ভেজাতে, নয়নাভিরাম চা বাগানের সুশীতল পথ ধরে হাঁটতে সিলেটে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা।
শুক্রবার (৩ মে) সরকারি ছুটির দিন থাকায় সিলেটে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। সিলেটের সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি, লালাখাল এবং সিলেট নগরীর বিভিন্ন চা বাগান ও হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার এলাকায় পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি হিট স্ট্রোকে মরছে মুরগি, কমছে ডিম উৎপাদন বজ্রপাতে একদিনে প্রাণ গেলো ৯ জনেরঅবশ্য সিলেটে সারাবছরই শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের ভিড় থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।
শুক্রবার ঢাকা, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এসেছেন সিলেটে। তীব্র তাপপ্রবাহে এসব অঞ্চলসহ সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কোথাও কোথাও হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি চলছে দেশে।
Advertisement
সারাদেশের অবস্থা যেখানে অস্বস্থিতে, তখন ঠিক বিপরীত অবস্থায় প্রকৃতিকন্যা সিলেটে। গত সপ্তাহ দুয়েক থেকে সিলেটে প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যায় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি নামে। শেষ রাতে মূষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে আকাশ থেকে শিলা পড়ে। ভোরের আলোতে খানিকটা ঠান্ডাও অনভূত হয়। আবার সকালের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে দুপুরের দিকে রূপ বদলে ফেলে সূর্য। ভর দুপুরের সূর্যের তীব্রতা জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলে। বিকেল গড়াতেই আবার সেই তীব্রতা ভুলিয়ে দেয় বিকেলের প্রকৃতি। শরতের মতো আকাশে তুলার মতো উড়তে থাকে সাদা মেঘ। আবার সন্ধ্যার পর ফের শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিস থেকে পাঠানো বার্তায় বৃষ্টিপাত রেকর্ডের পরিমাণ ছিল একেবারে কম। তবে তার আগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ছয় ঘণ্টায় ৫৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একই সময়ে ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর ঘাটের দায়িত্বে থাকা তোয়াহির আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সিলেটের তাপমাত্রা অনেক ভালো। এ সুযোগে অনেক পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। প্রতি শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের যেরকম চাপ থাকে আজ তার চেয়ে অনেকটা বেশি। পর্যটন স্পটে পানি বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকরা দ্রুত আসা-যাওযা করতে পারছেন।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, অন্যান্য স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে আজ পর্যটকদের ভিড় বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় সিলেটের আবহাওয়া ভালো থাকায় পর্যটকরা এখানে আসছেন। পর্যটকদের সবধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আহমেদ জামিল/এসআর/এমএস