জাতীয়

থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা: প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ড সফরকে ফলপ্রসূ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, থাইল্যান্ডে আমার সরকারি সফরটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি আমাদের দু’দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২ মে) গণভবনে থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সরকারি সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সফরে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর বিষয়ে অগ্রগতি, আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে বিশেষ গুরুত্ব পালন করবে।

২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’র প্রার্থিতা লাভের জন্য এ সফর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে।

Advertisement

তিনি মনে করেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ-সুরক্ষা এবং আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের বিশেষ প্রয়াস হিসেবে এ সফরটি সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে করি।

সফরের পুরো চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ এপ্রিল সকালে ইউএন-এসক্যাপের একটি অধিবেশনে এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলে সহযোগিতা জোরদার করার মধ্যদিয়ে জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন বিষয়ে বক্তব্য দিই। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি ইউএন-এসক্যাপের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন মডেল এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করি।

আমি সবধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার জন্য আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। ফিলিস্তিনে অব্যাহত গণহত্যা, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইদিন বিকেলে আমি থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে মহামহিম রাজা মহা ভাজিরালংর্কন ফ্রা ভাজিরা ক্লাওচা উহুয়া এবং মহামহিমা রাণী সুধিদা বজ্রসুধা বিমলা লক্ষণের সঙ্গে দেখা করি। এ সময় থাইল্যান্ডের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য রাজা ও রাণীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং দুদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে একসঙ্গে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।

Advertisement

তিনি বলেন, সফরের তৃতীয় দিন ২৬ এপ্রিল গভর্নমেন্ট হাউজে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। বৈঠকে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়তা কামনা করি। একান্ত বৈঠকে শেষে আমার এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দু’দেশের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অধিকতর উন্নয়নকল্পে গঠনমূলক আলোচনা করি। এ সময় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, ডিজিটালাইজড এবং জলবায়ু সহনশীল দেশে রূপান্তর এবং বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মূল্যবান অংশীদার হিসেবে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করি।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে পারি। এজন্য থাইল্যান্ডের সঙ্গে সহযোগতিা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা করি। থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাই। নিরবচ্ছিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের রানং বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি কোস্টাল শিপিং দ্রুত চালু করার মাধ্যমে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে একমত পোষণ করি। এছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সুদৃঢ়করণে ‘ভারত-মিয়ারমার-থাইল্যান্ড’ তে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড উভয়ই বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করি যে, বিমসটেক এ অঞ্চলের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বিমসটেকের বর্তমান সভাপতি হিসেবে অভিনন্দন জানাই এবং তার নেতৃত্বে থাইল্যান্ড শিগগির বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে সফলভাবে আয়োজন করবে মর্মে শুভকামনা জানাই।

সরকারপ্রধান বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ আসিয়ানের প্রতিবেশী। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্বএশিয়ার মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশের আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ মর্যাদা চলতি বছরের মধ্যে প্রাপ্তির জন্য আবেদনের বিষয়ে থাইল্যান্ড সরকারের কাছে আবারও অনুরোধ জানিয়েছি। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দু’দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি আগ্রহপত্রে সই হয়েছে।

এসইউজে/এমএএইচ/জিকেএস