‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’—এমন নানান স্লোগানে মুখরিত জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বর। একে একে র্যালি ও মিছিল নিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঝাঁঝালো কণ্ঠে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের কথা বলছেন নেতারা। পাশাপাশি চলছে গণসংগীত ও আবৃত্তিও। শিল্পীরা গাইছেন মেহনতি মানুষের জয়গান।
Advertisement
আবার কেউবা চাকরি হারিয়ে ছুটে এসেছেন শেষ ভরসাস্থল প্রেস ক্লাবে। সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরছেন ছাঁটাই করা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া নানা বঞ্চনার গল্প। তাদের প্রত্যাশা—গণমাধ্যমে খবর এলে হয়তো খুলবে ভাগ্যের শিঁকে।
বুধবার (১ মে) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাব ও এর আশপাশের বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। র্যালি ও মিছিলে অংশ নেওয়ারা মাথায় বেঁধেছেন লাল ফিতা। হাতে লাল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা—দাবি-দাওয়া সংবলিত নানা স্লোগান।
সরেজমিন দেখা গেছে, এদিন সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে ও ভেতরে অন্তত ৩০টি শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। বিকেলে আরও ১০-১২টি সংগঠনের কর্মসূচি রয়েছে। ফলে অন্য স্বাভাবিক দিনের চেয়েও আজ দিনভর বিক্ষিপ্ত মিছিল-সমাবেশে বেশি মুখরিত প্রেস ক্লাব এলাকা।
Advertisement
র্যালি, মিছিল ও সমাবেশে সংগঠনগুলোর নেতারা শ্রমঘণ্টা কমিয়ে আইন করা, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত, নারী শ্রমিকদের সমমজুরি, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারণ, হুটহাট কর্মী ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরছেন।
সম্মিলিত নারী শ্রমিক সমিতির সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ছেলেখেলা করে। তারা যখন-তখন ছাঁটাই করে। নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। মাতৃত্বকালীন ছুটিও দেওয়া হয় না। কোনো মা গর্ভবতী হলে তাকে ছুটি না দিয়ে ছাঁটাই করে ফেলা হয়। মহান মে দিবসে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছি। আশা করি, সরকার নারী শ্রমিকদের এসব অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সহায়তা করবে।
এদিকে, মে দিবসের ঠিক আগের দিন চাকরি হারিয়েছেন ইনফ্রাসটেকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (আইডিসিওএল) প্রায় ১০০ কর্মী। মহান মে দিবসে তারা চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবি জানিয়ে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাকরি হারানোদের মধ্যে একজন মো. আবু সিনা। তিনি আইডিসিওএলের সিনিয়র কোয়ালিটি ইনপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (৩০ এপ্রিল) চিঠি দিয়ে তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
Advertisement
আবু সিনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ মে দিবস। অথচ এর আগের দিন আমরা চাকরি হারালাম। আজকের এ দিনে আমরা খুব কষ্ট নিয়ে এখানে এসেছি। চাকরি যদি না ফিরে পাই, জানি না সংসার চালাবো কীভাবে? নতুন চাকরি আমরা কবে পাবো, কোথায় পাবো? আজকে সংবাদ সম্মেলন করবো। আমাদের দাবি তুলে ধরবো।’
প্রেস ক্লাবে যেসব সংগঠনের কর্মসূচি চলছে
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি), ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (ট্যাফ), বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (বিএফটিইউসি), বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স সেন্টার, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাইভেটকার চালক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা মহানগরী প্রাইভেটকার ও ট্যাক্সি ক্যাব ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, জাতীয় গার্মেন্টস দর্জি শ্রমিক কর্মচারী কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় শ্রমিক জোট, বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস (বিএলসি), বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, শ্রমজীবী পরিষদ।
এএএইচ/জেডএইচ/এএসএম