স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় ভোরে ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নের পর এ সুপারিশ করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)।
Advertisement
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে। এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হবে রপ্তানি খাতকে। এ খাতে পণ্যে শুল্ক আরোপিত হলে বা বেড়ে গেলে তার জেরে রপ্তানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রকাশিত ‘অ্যাক্সপ্যান্ডিং অ্যান্ড ডাইভারসিফাইং এক্সপোর্টস ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এডিবির এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বাস্তবতায় দেশের রপ্তানির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলেই মনে করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে শুল্কের হার বেড়ে যেতে পারে। কানাডায় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত, ভারতে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত, জাপানে ৮ দশমিক ৭ ও চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এ ছাড়া আমদানিতে ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই, এমন অনেক পণ্য আবারও নেতিবাচক তালিকায় ঢুকে যেতে পারে।
Advertisement
এডিবি জানিয়েছে, তাদের এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা যায়, বাংলাদেশের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে না। এ সুবিধার আলোকে এলডিসি-বহির্ভূত দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। জিএসপি প্লাস সুবিধা না পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিএসপি প্লাস সুবিধা না পেলেও বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম এনহান্সড প্রেফারেন্সেস’– এর আলোকে বাজার-সুবিধা পাবে। এতে অধিকাংশ পণ্যই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পণ্যের উৎসবিধি আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে উৎসবিধি অতটা কঠোর না হলেও এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবেই তা করা হবে।
দেশের রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য না আসার কারণ হিসেবে প্রণোদনা বৈষম্যের কথা উল্লেখ করেছে এডিবি। তারা বলেছে, বাংলাদেশ সরকার সময়-সময় রপ্তানি খাতে যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাক খাতকে উদ্দেশ্য করে প্রণয়ন করা হয়েছে। শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি, বন্ডেড ওয়্যারহাউস–সুবিধা, আয়কর ছাড় বা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার অনেকটি সব খাতের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু দেখা গেছে, এসব সুবিধার বেশির ভাগই মূলত তৈরি পোশাক খাত পেয়েছে। এ শিল্প ১৯৯০-এর দশকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস–সুবিধা পেত, কিন্তু তখন তাদের নগদ সুবিধা দেওয়া হয়েছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাক খাতের সুবিধার যৌক্তিকীকরণ করা হলেও বন্ডেড ওয়্যারহাউস–সুবিধা অন্যান্য খাত পায়নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত পোশাক খাত ব্যতীত অন্যান্য রপ্তানিকারকেরা উচ্চ হারে করপোরেট কর দিয়েছে। এমনকি তাদের অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগও ছিল সীমিত। দেশে ব্যবসার জগতে তৈরি পোশাক খাতের প্রভাব এতটাই বেশি যে নীতিগত সুবিধার সিংহভাগ তারাই পায় বলে মনে করে এডিবির।
Advertisement
এমওএস/এমএএইচ/এএসএম