দেশজুড়ে

বোরো ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম, ক্রেতার অভাবে দুশ্চিন্তায় পাইকাররা

বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের ‘গেটওয়ে’ এবং খাদ্যে উদ্বৃত্ত বোরো শস্যের অফুরন্ত ভান্ডার হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা। এ জেলার হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই ধানে জেলার বৃহত্তর ভৈরব মোকাম ভরপুর। তবে ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিতায় রয়েছেন ধান বিক্রেতারা।

Advertisement

ভৈরব মোকামে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, হবিগঞ্জের দিরাই, লাখাই, আজমিরিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও সিলেটের কিছু অংশের ধান স্বাধীনতা পূর্ব থেকে নিয়ে আসেন পাইকাররা। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে এই ধানের মোকাম হওয়ায় নদীপথে ধান নিয়ে আসতে সুবিধা হয় হাওরের পাইকারদের। এ কারণেই ভৈরবে সমৃদ্ধ ধানের মোকাম প্রতিষ্ঠা হয়। সময়ের ব্যবধানে ভৈরবের ধানের মোকামের জৌলুশ কিছুটা কমলেও হাওরের কিছু অংশের উৎপাদিত ধান এখনও ভৈরব মোকামের মাধ্যমে সারাদেশে বাজারজাত হয়ে থাকে।

এই মোকাম থেকে ধান কিনে নিয়ে যান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, লালমনিরহাট, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ব্যবসায়ী ও মিলাররা। ২৯ চৈত্র থেকে এ বছর ভৈরব মোকামে নতুন ধানের আমদানি শুরু হয়।

সরেজমিনে ভৈরবের ধানের মোকামে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক ধানবোঝাই নৌকা মেঘনা নদী ঘাটে নোঙর করা। সবকটি নৌকা হাওর থেকে ধান নিয়ে এসেছে। শ্রমিকরা নৌকা থেকে ধান খালাস করে ঘাটে স্তূপ আকারে বিক্রির জন্য সারি সারি করে সাজিয়ে রাখছেন। কারণ এসব ধান ঘাটেই বিক্রি হয়।

Advertisement

জানা গেছে, ভৈরবের এই মোকামে শুধু কিশোরগঞ্জের হাওরের ধান নয়, পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার হাওরের ধান এই মোকামে নিয়ে আসেন কৃষক ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এই ধান কিনতে সারাদেশ থেকেই পাইকাররা আসেন মোকামে।

গত বছর হাওরে চিটায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন কৃষকরা। বিশেষ করে বিআর-২৮ ধান চিটার কারণে ক্ষেত থেকে বাড়িতেই নিতে পারেননি চাষিরা। তবে এবার হাওরে কোথাও চিটার খবর পাওয়া যায়নি। বৈশাখ মাস শুরুর কয়েকদিন আগ থেকে হাওরে মোটা জাতের ধান কাটা শুরু করেন কৃষকরা। এবার বিঘা প্রতি গড় মোটা জাতের ধানের ফলন ২২ মণ পাওয়া যাচ্ছে। ধানের বেপারীরা হাওর এলাকার কৃষকের কাছ থেকে মণ প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ধান ক্রয় করছেন।

১ হাজার মণ নতুন ধান নৌকা বোঝায় করে ভৈরব মোকামের ঘাটে ভিড়েছেন হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের কৃষক সুবীর। তিনি বলেন, এই বছর হাওরে প্রচুর পরিমাণে ধান হয়েছে। ধান বিক্রির জন্য ভৈরব মোকামে নিয়ে এসেছি। এবছর ধানের দাম খুব কম তাই ফসল বেশি পেলেও আমাদের লাভ হবে না। ৮০০ টাকা মণের উপরে দাম হচ্ছে না। তাই ধান নিয়ে বসে আছি।

নেত্রকোনা থেকে ট্রলার বোঝায় করে ধান নিয়ে এসেছেন সফির উদ্দিন নামে এক ধান ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ধান বোঝায় করা ট্রলারটি নিয়ে ভৈরব ঘাটে এসেছেন ভোর সকালে। তার ট্রলারে প্রায় কয়েকশো মণ ধান রয়েছে। প্রতি বছরই বোরোধান নিয়ে ভৈরব মোকামে আসেন। সকাল থেকে ধান নিয়ে বসে থাকলেও কেউ কেনার দাম বলছে না।

Advertisement

হবিগঞ্জ থেকে দেড় হাজার মণ ধান নিয়ে ভৈরবের মোকামে এসেছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, হাওরে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ধান নিয়ে ভৈরব মেকামে এসে বিপাকে পড়েছি। প্রচুর ধান আসলেও আড়ৎ মালিকেরা দাম বেশি বলছে না। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি দামে ধান কিনে ভৈরব মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসি। এবছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম খুব কম। ফসল বেশি হলেও ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।

ভৈরব মোকামের হেলাল ট্রেডার্সের মালিক হেলাল মিয়া জানান, হাওরাঞ্চল থেকে নৌকা যোগে বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত ধান মোকামে নিয়ে আসছেন কৃষক ও স্থানীয় পাইকাররা। তবে মোকামে দেশের বিভিন্ন এলাকার খরিদদার কম থাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা। বর্তমানে মোকামে মোটা ধান প্রতি মণ ৭৮০ -৮০০ টাকা দরে ও চিকন ধান প্রতি মণ ৯০০-৯২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহজালাল ট্রের্ডাসের মালিক কামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে নতুন ধান আমদানির পুরো সিজন। তাই ভৈরব ধানের মোকামে প্রচুর ধানের আমদানি হচ্ছে। সেই তুলানায় মোকামে ধানের ক্রেতা খুব কম রয়েছে।

ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হুমায়ুন কবীর জানান, ভৈরব মেঘনা নদীর তীরে হওয়াতে ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী স্থান। বৈশাখ মাসের শুরুতে প্রতি বছর ভৈরব মোকামে হাওরাঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আমদানি হয়। এই মোকাম থেকে ধান কিনতে দেশের বিভিন্ন চাতাল মিলের মালিকরা আসেন। এবছর মোকামে পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ রয়েছে। নতুন ধান মণপ্রতি ৭৮০-৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে ভেজা ধান বেশি বিক্রি হচ্ছে। যদি শুকনা ধান বাজারে আসে তাহলে ধানের দাম আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

এসকে রাসেল/এফএ/এমএস