শিক্ষা

স্কুলে আসার পথেই অসুস্থ, ক্লাস না করে ফিরেছে অনেক শিক্ষার্থী

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আজমিরা ইয়াসমিন। সে বনশ্রী শাখার ইংলিশ ভার্সনের দিবা শাখার ছাত্রী। রুটিন অনুযায়ী—তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে তার ক্লাস শুরু দুপুর ১২টায়। চলবে বিকেল ৪টা ৫ মিনিট পর্যন্ত।

Advertisement

রোববার (২৮ এপ্রিল) স্কুল খোলার দিকে ভরদুপুরে গণপরিবহনে চড়ে স্কুলে এসে ক্লাসে ঢোকার আগেই কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে আজমিরা। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ক্লাস না করেই মায়ের সঙ্গে আবারও বাসায় ফিরে যায় সে।

আজমিরার মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাসা নতুনবাজার। ১১টার দিকে বেরিয়েছি। ১০ মিনিট হাঁটার পথ। তারপর মেইন রাস্তায় এসে বাস ধরেছি। বাড্ডা-রামপুরার জ্যাম ঠেলে ৩৫-৪০ মিনিট পর স্কুলে এসে পৌঁছালাম। বাসের মধ্যেই মেয়েটা বমি আসছে বলছিল। এখানে আসার পর ঠিকভাবে একা হেঁটে ভেতরে ঢুকতেও পারছে না। ও এখন ক্লাস করবে কীভাবে? স্যারদের সঙ্গে দেখা করে বলে এখন চলে যাচ্ছি।’

শুধু আজমিরা নয়, এ স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তারা ক্লাস না করেই বাসায় ফিরে গেছে। যাতায়াতের সময়ই তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান অভিভাবকরা। ক্লাস করতেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

Advertisement

জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই শিফটে ক্লাস চলছে। মর্নিং শিফট ও ডে শিফট। স্কুলটির রুটিন অনুযায়ী—মর্নিং শিফটে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস চলছে ৭টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে সকাল ৭টা থেকে ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস সকাল ৭টা থেকে ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। এছাড়া দশম শ্রেণির ক্লাস চলছে সকাল ৭টা থেকে ১১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত।

অন্যদিকে ডে শিফটে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলছে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা ৫ মিনিট পর্যন্ত। ষষ্ঠ থেকে নবমে দুপুর ১২টা থেকে ৪টা ৪০ মিনিট, দশম শ্রেণিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত।

অভিভাবকরা বলছেন, সকালে দিকে যাদের ক্লাস, তার কিছুটা স্বস্তিতে ক্লাস করে ফিরেছে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত যাদের ক্লাস তারা স্কুলে আসতে পথেই অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে অসুস্থবোধ করায় ফিরেও গেছেন।

চতুর্থ শ্রেণির আরেক ছাত্রী মনিকা। বাবার সঙ্গে স্কুলে এসেছে সে। মনিকা বলে, ক্লাসেও অনেক গরম। ফ্যান থাকলেও গরম লাগছে খুব। মাথা ঘেমে যাচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই খুললো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মনিকার বাবা সুব্রত দাস বলেন, এত গরমের মধ্যে স্কুল খোলা রাখা উচিত হয়নি। আমরাও বাধ্য হয়ে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে এসেছি। না এলে মাসিক বেতনের সঙ্গে জরিমানার টাকা গুনতে হবে। আবার মেয়েটাও পিছিয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, আরও কিছুদিন স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে হয়তো কিছুটা ক্ষতি হবে। তারপরও আমরা অভিভাবকরা বাসায় সময় দিয়ে শিক্ষক রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার ইংরেজি ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকসেদুল ইসলাম বলেন, গরমে শিশুদের অনেকে পথে আসতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বলে শুনেছি। তবে স্কুলে শ্রেণিকক্ষে যথেষ্ট স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে। ক্লাসে কারও সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি। আমরা সতর্ক রয়েছি।

উপস্থিতি ভালো, ক্লাসে অস্বস্তি

দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ। তার মধ্যেও স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি শাখা, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভিকারুননিসা ন্যূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে কোন ক্লাসে কত শতাংশ উপস্থিতি তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি তারা।

শিক্ষকরা জানান, অনেকদিন বন্ধ থাকায় অভিভাবকরাও চাইছেন তাদের সন্তানরা স্কুলে আসুক। তবে বিরূপ আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়া নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। আজ প্রথম দিন হওয়ায় অনেকে স্কুলে এসেছে। আগামীকাল বোঝা যাবে, তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুলে উপস্থিতি কমছে কি না।

আরও পড়ুন

তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীর ক্ষতি হলে দায় সরকারের: অভিভাবক ফোরাম

ভিকারুননিসা ন্যূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র পাল বলেন, ‘আজই প্রথম স্কুল খুলেছে, ক্লাস হচ্ছে। আমাদের শাখায় সব ক্লাসে উপস্থিতি স্বাভাবিক। অতিরিক্ত গরমে শিশুরা হাফিয়ে উঠছে এটা সত্য। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা আমাদের স্কুলে নেই।’

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন তালুকদার বলেন, ‘উপস্থিতি আশাব্যাঞ্জক। তবে আবহাওয়াটা বিরূপ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দরকার। স্বাস্থ্য সুরক্ষাও দরকার। আমরা সেভাবেই ক্লাস নিচ্ছি। আশা করি সব শিশু সুস্থভাবে ক্লাসে আসা-যাওয়া করবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। এখনো অসুস্থতার তেমন খবর পাইনি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবাই নির্দেশনা মেনে ক্লাস করালে আশা করি সমস্যা হবে না।’

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ছুটি বাড়ানো হয়। এতে আরও এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস শুরুর কথা বলা হয়। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যে শিখন ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণে এখন থেকে শনিবারও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খোলা থাকবে।

এদিকে, সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে ক্লাস শুরু করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নতুন সূচি অনুযায়ী—এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলবে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আর দুই শিফটের বিদ্যালয়ে প্রথম শিফট ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চললেও বন্ধ থাকবে অ্যাসেম্বলি। পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় আপাতত বন্ধই থাকছে।

এএএইচ/এমআরএম/এমএস