দেশজুড়ে

তাপপ্রবাহে পুড়ছে উত্তরের চা বাগান

তাপপ্রবাহে পুড়ছে উত্তরের চা বাগান। ঝলসে যাচ্ছে গাছের কচি পাতা। ক্ষতির মুখে পড়ছেন পঞ্চগড়ের ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকরা। অতিরিক্ত সেচেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ফলে চলতি মৌসুমে সমতলে চা উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা চা বোর্ডসহ কারখানা মালিকদের।

Advertisement

চা বোর্ড সূত্র জানায়, ভালো মানের চা উৎপাদনের উপযুক্ত আবহাওয়া ২৬-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বর্তমানে পঞ্চগড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। গরমের কারণে চা গাছে লাল মাকড়সা, লুপারসহ পোঁকা মাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে চায়ের কচি পাতা কুঁড়ি কুঁকড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত খরচে সেচ দেওয়ার পরও ঝিমিয়ে পড়ছে বাগানের চা গাছ। ফলে চা পাতা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন চা বাগানে।

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতলে ২০০০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে চা চাষে বিপ্লব ঘটে উত্তরের এ জেলায়। অর্থনীতির বড় একটা অংশের যোগান আসতে শুরু করে জেলার চা চাষ থেকে। উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় এখানে ২৯টি চা বাগান গড়ে উঠে। এছাড়া ক্ষুদ্র পর্যায়ে আট হাজার ৩৭১ জন চাষি বিভিন্ন পরিমাণে সমতলের জমিতে চা চাষ অব্যাহত রেখেছেন। ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে সম্প্রসারণ হয় চা চাষ। প্রতি বছর উৎপাদন বেড়েই চলছিল। গেল চা উৎপাদন মৌসুমে উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ে ২৮টি চা কারখানায় চা উৎপাদন হয় এক কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। তৈরি চা উৎপাদন হিসেবে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চলে পরিণত হয় পঞ্চগড়।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সেচ ও কীটনাশকের অভাবে নষ্ট হওয়ার উপক্রম অনেক চা বাগান। উৎপাদিত চা পাতার উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে চা বাগানের যথাযথ পরিচর্যা করতেও আগ্রহ নয় ক্ষুদ্র চা চাষিরা। প্রয়োজন মতো কীটনাশক প্রয়োগসহ পর্যাপ্ত সেচের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সমতলের ক্ষুদ্র চা বাগান। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এসব ক্ষুদ্র চা বাগানে

Advertisement

জেলা সদরের রামের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকার চা চাষি হাসিবুল ইসলাম বলেন, প্রখর রোদে চায়ের গাছ মারা যাচ্ছে। সেচ দেওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে আবার শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকা মাকড়ের আক্রমণও অনেক বেড়েছে। অতিরিক্ত খরচে সেচ এবং কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

একই এলাকার আরেক চা চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, মার্চের শুরুতে প্রথম রাউন্ডে কিছু চা পাতা কারখানায় দিয়েছি। এপ্রিলের শুরু থেকে ২য় রাউন্ডের চা উত্তোলনের কথা। কিন্তু গরমে বাগানে পাতা নেই। নতুন পাতা গজানোর আগেই কুঁকড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক পানি দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি এলাকার চা চাষি বাবুল ইসলাম বলেন, পানি সেচ দিয়ে আমরা কুলাতে পারছি না। অনাবৃষ্টির কারণে তাপপ্রবাহ বেড়েছে। গরমে চা বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চা পাতার দাম অনুযায়ী অতিরিক্ত খরচ করে কীটনাশক আর সেচ দিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছি। শুধু আমাদের খরচ বাড়ছে, চা পাতার দাম বাড়ছে না।

পঞ্চগড় ফার-ইস্ট টি ইন্ডাস্ট্রির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েদ উল হাসান প্রধান বলেন, আমাদের নতুন কারখানা। চলতি মৌসুমে প্রথম রাউন্ডে কিছু পাতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে কাঁচা পাতার অভাবে কারখানা বন্ধ রয়েছে। মার্চের পর সাধারণত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ২য় রাউন্ডের চা সংগ্রহ করা হয়।

Advertisement

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন বলেন, এবার গরমে অন্য বছরের তুলনায় চা উৎপাদন নেই বললেও চলে। তীব্র গরম এবং বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। চায়ের গাছসহ পাতা কুঁকড়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। পাতার অভাবে ২৮টি চালু কারখানার মধ্যে প্রায় অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য আমরা চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যহতের আশঙ্কা করছি।

সফিকুল আলম/আরএইচ/জেআইএম