কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
Advertisement
اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ اِنَّ شَانِئَکَ هُوَ الۡاَبۡتَرُনিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ। (সুরা কাওসার: ১-৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَالۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰهَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ لَکُمۡ فِیۡهَا خَیۡرٌ فَاذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلَیۡهَا صَوَآفَّ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُنُوۡبُهَا فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰهَا لَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَআর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ: ৩৬, ৩৭)
Advertisement
যারা জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা সোনা বা এর সমমূল্যের মালিক হয়, হানাফি মাজহাব অনুযায়ী তাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। অন্যান্য মাজহাবে কোরবানি ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নতে মুআক্কাদা।
অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কোরবানি করে তার সওয়াবের আশা করা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন,
أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّيَ افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَإِنِّي أَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَلِيَ أَجْرٌ أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ এক ব্যক্তি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললো, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তার ব্যাপারে আমি ধারণা করি, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তবে সাদাকার অসিয়ত করতেন। আমি যদি তার পক্ষে সাদাকা্ করি, তবে কি আমার এ কাজের কোন সাওয়াব হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। (সহিহ মুসলিম: ৪০৭৪)
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করার পাশাপাশি নিজের উম্মতের পক্ষ থেকেও কোরবানি করতেন। আয়েশা (রা.) ও আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيمَيْنِ سَمِينَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ وَذَبَحَ الآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلمআল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। এর একটি নিজের উম্মাতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ৩১২২)
Advertisement
মৃত ব্যক্তি যদি কোরবানির জন্য অসিয়ত না করে থাকে তবে মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কোরবানি নফল কোরবানি গণ্য হবে এবং ওই কোরবানির গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে, আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে।
আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে, তবে ওই অসিয়ত পূরণের জন্য দেওয়াে কোরবানির গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না এবং ধনী আত্মীয়দের দেওয়া যাবে না। ওই গোশত দরিদ্র ও মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।
ওএফএফ/এএসএম