দেশজুড়ে

উৎপাদন বেশি হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে পানির দামে সবজি

যে টমেটো গত বছর জমিতে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। এবার সেই টমেটো চাষিরা বিক্রি করছেন মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকায়। ভরা মৌসুমে টমেটো ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও শেষ সময়ে মাথায় হাত উঠেছে কৃষকের।

Advertisement

উত্তরাঞ্চলে জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির বড় মোকাম গোবিন্দনগর। ঠাকুরগাঁও থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ করা হয়। আর শীত মৌসুমেই এ অঞ্চলের চাষিরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। দাম না পেয়ে অনেক টমেটো ফেলে দিচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

সারা দেশের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ টমেটো চাষ হয়। এবার টমোটোর বাম্পার ফলনও হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দাম পেলেও বর্তমান বাজারে টমেটোর দাম ৩-৫ টাকা কেজি। আবার অনেক চাষি টমেটো বিক্রিও করতে পারছেন না। ফলে চাষিদের অনেকেই টমেটো ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামেই বাজার থেকে টমেটো কিনছেন।

সদর উপজেলার নারগুন এলাকার চাষি এনামুল বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাত্র কয়েক দিন টমেটোর দাম ভালো পেয়েছি। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি টমেটো ৩ থেকে ৫ টাকা দামে বিক্রি করছি। বাজারে সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। বেশি দামে বিক্রি হলেও আমরা সেই দাম পাচ্ছি না।

Advertisement

চাষিরা আড়তদারদের কাছে কেজি প্রতি মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা দামে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ জমি থেকে টমেটো তোলার জন্য শ্রমিককে টাকা আরও বেশি দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। কোনো কৃষকই এবার উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন না। ফলে জেলার টমেটো চাষিরা সবাই আমার মতো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চণ্ডিপুর এলাকার প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়।

কপিচাষি আবদুল মালেক বলেন, গড়েয়া আড়তে বাজারে সবজির বড় মোকাম রয়েছে। এ মোকাম থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করা হয়। মোকামে এখন চাষিরা প্রতি পিস বাঁধা ও ফুলকপি ৫ থেকে ৭ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এত কম দামে এ এলাকার চাষিরা কখনো কপি বিক্রি করেননি। একইভাবে পাটশাকসহ সব সবজি বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা আঁটি দরে। ফলে এলাকার সবজি চাষিরা এ মৌসুমে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Advertisement

এদিকে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পেঁপে এবং লাউ চাষ হয়। উপজেলা সদরের লাউচাষি নিজাম জানান, এ অঞ্চলের লাউচাষিরা বর্তমানে আড়তদারদের কাছে প্রতি পিচ লাউ ৫-৭ টাকা দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ গতবছর ২০-২৫ টাকা প্রতি পিচ দরে বিক্রি করেছেন। এছাড়া শসা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১-২ টাকা কেজি দরে। শসা মাসখানেক আগে চাষিরা ২০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। একইভাবে বেগুনের দামও কমেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির বড় মোকাম রয়েছে পৌরসভার গোবিন্দনগর এলাকায়। এ মোকামের আড়তদার মতিন মিয়া বলেন, বর্তমানে সারাদেশেই সবজির দাম কম। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের আড়তদাররাও চাষিদের কাছ থেকে কাম দামে সবজি কিনছেন। এছাড়া এ মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও বেড়েছে। সবমিলিয়ে এবার সবজির দাম কম। তবে বেশি দামে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

পৌরসভার কালিবাড়ির সবচেয়ে বড় সবজির বাজার থেকে সবজি কিনছিলেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, কম দামের কারণে চাষিরা টমেটো ফেলে দিলেও সাধারণ ক্রেতারা ১৫-২০ টাকা কেজি দরে টমেটো কিনছেন। চাষিরা দাম না পেলেও আড়তদার এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামে সবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির দাম অনেক কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ব্যাপক পরিমাণের সবজি উৎপন্ন হয় এই জেলায়। চাহিদার তুলনায় বেশি সবজি উৎপাদন হওয়ায় দাম অনেকটা কম। তবে ঠাকুরগাঁও জেলার বাইরে যেন তারা ভালোভাবে সবজি বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি।

এফএ/এমএস