ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলেছে। ক্রমেই শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ জোরালো ও সহিংস হয়ে উঠছে। গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মার্কিন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে।
Advertisement
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকালে কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষ স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে চলে যেতে বাধ্য করতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেখানে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
Advertisement
এদিকে, ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় বৃহস্পতিবার আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইমোরি পুলিশ বিভাগ বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অংশে বিক্ষোভ চলছিল, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে ডাকার পর সেখানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের পর নতুন করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার ও ইসরায়েলের সমর্থনে মার্কিন সরকারকে অস্ত্র উৎপাদনসহ অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের অর্থ বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইসরায়েলে অর্থায়নের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। বাইডেন প্রশাসন যা করছে, তা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার জন্য দায়ী।
Advertisement
এদিকে অনেকের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তার কয়েকটিতে ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। কলাম্বিয়াসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ইহুদি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ক্যাম্পাসে অনিরাপদ বোধ করছেন। যদিও এই বিক্ষোভে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মিনিসোটার ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসউইমেন ইলহান ওমর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ইলহান ওমরের মেয়ে ইসরা হিরসিকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় স্থানীয় পুলিশ।
ইলহান ওমর বলেন, মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এখন স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা
এসএএইচ