পাহাড়সম বেকারত্বের এদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস বিদ্যুৎ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করাসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সহায়ক। এ ব্যাপারে সরকার যতো মনোযোগী হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ ততোটাই প্রশস্ত হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৫ অনুযায়ী, দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বছরে গড়ে মাত্র তিন লাখ লোক চাকরি পেয়েছেন। এর ফলে বেড়েছে বেকারত্বের হার। অথচ এর আগের এক দশক ধরে বছরে গড়ে ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে কমংসংস্থান বাড়বে সেখানে উল্টো কমছে। এরজন্য নানাবিধ কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। সহযোগী একটি দৈনিকের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও কারখানা তৈরির জন্য জমি পাচ্ছেন না বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। আবার জমি পেলেও গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না অনেকে। যন্ত্রপাতি বসানোর পর গ্যাস-সংযোগের অভাবে বসে আছে বহু কারখানা। গ্যাস ও জমির সংকট দূর করতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা চলছে। অথচ ব্যাংকগুলো প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে। নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। ফলে উদ্যোক্তা না পেয়ে এ বিপুল অর্থ নামমাত্র সুদে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ব্যাংকগুলো।এছাড়া বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও অত্যন্ত জরুরি। ছয় বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কথা ছিল, কিন্তু ১১ বছরেও শেষ হয়নি। জমির সংকট দূর করতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ১০টি উদ্বোধন করা হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দ্রুত গতিতে এগুতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সবচেয়ে বেশি উপার্জন খাত হবে-এমনটি আশা করা হচ্ছে। এমনও বলা হচ্ছে এই খাতের আয় পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে । এটা নিঃসন্দেহে আশার দিক। এ জন্য সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুনোর কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তি এসে পাল্টে দিচ্ছে সবকিছু। মানুষের চিন্তা-চেতনা ধ্যান ধারণায় যেমন পরিবর্তন আসছে তেমনি বদলে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্র। উদ্ভব হচ্ছে নতুন নতুন পেশার। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতেই পারলেই কেবল আমাদের কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণ সম্ভব হবে। এ জন্য তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তিবান্ধব একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। হাইটেক পার্কসহ এ সংক্রান্ত যে সমস্ত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে দ্রুততার সাথে। আমলাতন্ত্রের বেড়াজালে আটকে থাকলে মুখ থুবড়ে পড়বে সবকিছু। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে সেটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। দক্ষ জনশক্তি যদি আমরা রপ্তানি করতে পারি সেক্ষেত্রেও একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এসব বিবেচনায় প্রযুক্তিখাতের যথাযথ উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোদ্দাকথা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এইচআর/পিআর
Advertisement