স্বাস্থ্য

২৮ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী সামাজিক কুসংস্কারের শিকার: গবেষণা

সামাজিক কুসংস্কার যক্ষ্মা রোগী ও তার পরিবারকে প্রভাবিত করে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চিকিৎসা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে স্টিগমা বা কুসংস্কারে প্রভাব অনুভব করেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানী মহাখালীস্ত আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সম্পর্কিত স্টিগমার অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশে আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সামাজিক কুসংস্কার বা স্টিগমার প্রভাব অনেক। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যক্ষ্মারকারণে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিচালিত এই সমীক্ষায় স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ‘টিবি স্টিগমা অ্যাসেসমেন্ট ডেটা কালেকশন টুল’ ব্যবহার করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য, কমিউনিটি প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা।

ডা. সায়েরা বানুর অধীনে আইসিডিডিআর, বি-র পাবলিক প্রাইভেট মিক্সের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাদিম রেজা, সিনিয়র স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসার তানজিনা রহমান ও রিসার্চ অফিসার তামান্না সুলতানা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

Advertisement

গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো পরিচালিত গবেষণার বিষয়ে গবেষকরা বলেন, স্টিগমাকে প্রায়শই এমন একটি সামাজিক আচরণ হিসাবে দেখা হয়, যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হন তারা। গবেষণাটির মাধ্যমে যক্ষ্মারোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ যারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী করছে তাদের মধ্যে স্টিগমার উপস্থিতি ও মাত্রা সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যায় যক্ষ্মাসংক্রান্ত স্টিগমা নারীদের বেশি প্রভাবিত করে। এতে সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধায় পড়েন তারা।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চিকিৎসা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে স্টিগমার প্রভাব অনুভব করেন। তাদের পরিবারের প্রায় ২২ শতাংশ সদস্য স্টিগমার সম্মুখীন হন। আর ১৪ ভাগ যক্ষ্মা রোগী ও তাদের পরিবারের ১১ ভাগ সদস্য বাড়িতেও স্টিগমা অনুধাবন করেন।

গবেষণাটি বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সংক্রান্ত স্টিগমার ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে এটিকে যক্ষ্মার সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। স্টিগমার কাঠামোগত এবং সামাজিক কারণগুলো মোকাবেলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানানো হয়েছে। যার লক্ষ্য মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন রোগের বিষয়ে স্টিগমা সবসময়ই ছিল। এর কারণ শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি মন-মানসিকতার ওপরেও নির্ভর করে। ফলে চিকিৎসকরা স্টিগমামুক্ত কি না সেটাও নিশ্চিত নয়। আমাদের কেয়ার প্রভাইডাররাও অনেক সময় রোগীদের দূর থেকে করনীয় বলে দেন। যেটা অনেক সময় দুঃখজনক অবস্থায়ও পৌঁছায়।

তিনি আরও বলেন, টিবি নিয়ন্ত্রণে সরকার কি করতে পারে, সে ফর্মুলা দিলে সরকার অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের নলেজ বেইসড পরামর্শ থেকে সমাধানমূলক পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন। টিবি নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেক অর্জন করেছি তবে আমাদের আরও অনেক দূরে যেতে হবে।

Advertisement

স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআর, বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, একসময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতো, তবে এখন দেশের যেকোন প্রান্তে গেলেই যক্ষ্মার নাম শোনা যায়। এটা হয়েছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সফল উদ্যোগের কারণে। সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং পাশাপাশি আইসিডিডিআর, বি-তে যারা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করছেন, তাদের একনিষ্ঠতার কারণে। যক্ষ্মার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এভাবেই যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে।

এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. টিটু মিয়া, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ড. মো. মাহাফুজার রহমান সরকার এবং আইসিডিডিআর,বি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. সায়েরা বানু প্রমুখ।

এএএম/এমআইএইচএস